নতুন প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিহীনতা

এ যাবত কালে বড় বড় সব প্রযুক্তি পন্যই আবিষ্কৃত হয়েছে প্রযুক্তিহীন একটা পরিবেশ থেকে। যারা ভাবুক প্রকৃতির মানুষ, তাদের মধ্য থেকে নানা বিষয়ের চিন্তা বেরিয়ে আসে যার বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের অতটা জ্ঞান হয়তো নেই। আর যারা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক উন্নত পরিবেশে বসবাস করছে তারা তাদের চারপাশের নতুন নতুন প্রযুক্তিগত পন্য আর সেবা নিয়েই আলোচনায় রত থাকে।

প্রকৃত পক্ষে প্রযুক্তির কয়েকটা আবিষ্কারেরই নিয়মিত মানোন্নয়নের কাজ চলছে। একেবারে মৌলিক ধারনার পরিমান অনেক কম। নতুন ধারনাও তৈরি হচ্ছে খুবই কম। হলেও সেগুলো অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

উদাহরন ১: ফেইসবুক

১৯৯৪ সালে কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক চালু হলেও এটা এখন বিশ্বের সবচেয় বড় সমাজ। মূলত: প্রযুক্তির একটা সুবিধা গ্রহণ করার জন্য নিজস্ব চিন্তা চেতনার প্রকাশ করার মাধ্যম বানায়।

তারপর তা আর থেমে থাকে নি। এর পর অনেকেই ফেসবুক আদলে নিজেদের একটি মাধ্যম বানাতে চেয়েছে । কোনটিই এত বেশি সফলতা লাভ করতে পারে নি। আমি মূলত: এই উদাহরনটি টেনেছি এ জন্য যে, প্রযুক্তিগতভাবে কিছু করতে গেলে অন্যেরটা না দেখে নিজে ভিন্ন কিছু করার চেস্টা করা উচিত।

আমরা যারা সারাদিন ইন্টারনেটে থাকি তারা নিজের একটি ওয়েবসাইট বানানোর কথা ভাবলেই মনে করি নিজের একটি পোর্টফলিও বা ছবি গ্যালারী বা ব্লগ বানাবো। বাংলাদেশে সামহোয়ারইনের পর অনেক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এসেছে, কিন্তু এটির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি। কারন এটিই প্রথম। আর আপনি একটি কাজ ,যা আন্য সবাই করেছে তা করে কিভাবে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবেন। বিডিজবস পর এসেছে অনেক জব সাইট। ফোরামেরও একই অবস্থা। অন্যের আইডিয়া নিজে বাস্তবায়ন না করে নিজের একটি সতন্ত্র ধারণাকে বাস্তবায়ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আপনি একটি ওয়েবসাইট বানতে চান কিন্তু ভেবে দেকলেন যা বানাতে চান তা-ই বানানো হয়েগেছে। আসরে বেপারটা এমন না। আপনি দিন দিন বিভিন্ন ওয়ব ঘেটে নিজের নিজস্ব বলতে কিছু নেই। তাই হয়তো নতুন কিছু পাচ্ছেন না। যারা খুব কম সময় ওয়েবসাইটের থাকে । বা তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম তাদের জিজ।হাসা করেন আপনি একটা জিনিস চান অথচ ওয়েবে খুজে পান না। কি সেটা? তার কাছ থেকে কিছু উত্তর নেন। ‌এর পর আরো কয়েক জন থেকে এমন কিছু আইডিয়া বের হয়ে আসবে যা সারা দিন ওয়েব ঘেটেও খুজে পাননি।

এটা বলা অনুচিত হবে না যে, বেম কয়েকজন ইতো মধ্যে আমাকে তাদের আইডিয়র বেপারে শেয়ার করেছে । বলেছে তারা এমন এমন ওয়েব বানাতে চায় কেমন হবে। দু:খ জনক হলেও সত্য যে, কারোই নিজস্ব চিন্তা না।

উদাহরণ-২: রেডিও আবিষ্কার

১৮৯৬ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে কলকাতা বিঞ্জানাগারের তিন কিরোমিটার দূরত্বে সিগনাল প্রেরণ করতে সমর্থ হন। ১৮৯৯ সালে লন্ডনের রয়াল সোসাইটিতে তিনি তার আবিষ্কার উপস্থাপন করেন।

সেখানে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী Lord Rayleigh, Flemming, Lord Lister বিশ্বের অনেক নামী দামী ব্যক্তিবর্গের সামনে তিনি তার থিউরী উপস্থাপন করেন। মার্কণীও ছিলেন। স্যার জগদীশ তার কাজের প্যাটেন্ট করেননি। পরবর্তিতে আনেক নামী দামী ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই কাজ আজ আমাদের ওয়্যারলেস জগতে যুক্ত করেছে।

প্রকৃত বেপারটি এই জন্য বলেছি যে, একই আইডিয়াও উন্নয়নের মাধ্যমে অনেক কিছু করা সম্ভব যা আমার প্রথম কথার বিরোধী বলে আপনাদের মনে হতে পারে। তবে প্রয়োজনই মানুষকে নতুন নতুন জিনিস তৈরীতে উৎসাহ প্রদান করে। আর যারা সবসময় প্রযুক্তি পন্যের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন তারা হয়তো অনেককিছুই খুজে পাবেন না যা এখনো পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি।

আরও একটা বিষয় এখানে বলা দরকার আপনি যোখান থেকে শুরু করবেন । অনেকে সেখান থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। তাহলে তার এগিয়ে যাওয়াটা আগে শিখতে হবে… এইভাবে আমরা তৃতীয় বিশ্বের লোকজন পিছিয়ে আছি। নিজেদের মতো করে কিছু করার প্রতি রয়েছে আমাদের অসম্ভব অনীহা।

এ জন্য আমি মনে করি, প্রচন্ড ব্যস্ততা থেকে এসে নিজেকে কিছুটা আলাদা করে কাজ করতে হয়। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই এভাবে এগিয়ে গেছে। আশা করি আজকের এ গদবাধা আলোচনা আপনাদের মনে কিছুটা হলেও সারা দিয়েছে। সবাইকে মতামত জানানোর জন্য অনুরোধ করে শেষ করছি।

আমার আরও কিছু লেখাঃ

আরএসএস টিউটরিয়াল পর্বঃ এক

সফলতা পেতে ফ্রিল্যান্সিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান, নিজের একটি প্রতিষ্ঠান

মজার ও প্রয়োজনীয় ৭টি ফেসইবুক স্ট্যাটাস টিপস

3 thoughts on “নতুন প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিহীনতা”

  1. টিউটো ভাই আরো একবার মনে করিয়ে দিলেন “জটিল হল অতি সহজের সুসজ্জিত মহা সমাবেশ” – টিউটোরিয়ালবিডিতে আমার প্রথম লেখা।
    “আসলে আমরা বড় বড় প্রযুক্তি গুলোর জটিলতা দেখেই সময় পার করে দেই , কিন্তু তার পেছনে যে একটা সহজ সত্য লুকিয়ে আছে তা আমরা কম সময়ই অনুধাবন করি।”

    ধন্যবাদ।

  2. সম্পূর্ণ বেসিক জিনিসগুলো থেকে আমাদের শিক্ষাগ্রহণ শুরু করা উচিৎ। প্রতি দিন হাজার হাজার নতুন প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর নানাবিধ ব্যবহারের দিকে মনোযোগ সরিয়ে মূল ভিত্তির উপর কাজ করলে অনেক ভালভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। যদিও কর্ম ক্ষেত্রে অনেক সময় তা অগ্রাহ্য হয়।

Leave a Comment