সৃষ্টিশীলতা বনাম উৎপাদনশীলতা

ইদানিং লেখালেখির গতি কমে গেছে…কয়েকজন জানাচ্ছে, আমি নিজেও জানি যে লেখা কমে গেলে ভিজিটররা এসে নতুন কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে চলে যেতে পারে। এটা সাইটের অগ্রগতির বাধা।

মান সম্পন্ন পোষ্ট না পেয়ে অনেকে কিছু দিন সাইটে এসে আবার ফিরে চলে যায়। মূলতঃ মানুষ চায় নতুন ও চিত্তাকর্ষক বিষয় সম্পর্কে জানতে, আর তাই সারা বিশ্বে খবর ও সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলোই বেশি জনপ্রিয়। এখন কথা হলো চিত্তাকর্ষক ও সৃজনশীল কাজের পরিমান বেশি হয় না। ধিরে ধিরে সৃষ্টি হয়। এখন কি সৃজনশীলতাকে উৎপাদনশীলতার বাধা বা উৎপাদনশীলতাকে সৃজনশীলতার বাধা বলা যায়?

উৎপাদনশীলতা (Productivity) কি?

উৎপাদনশীলতা (Productivity) কি?
একটা একক সময়ে কাজের পরিমানকেই উৎপাদনশীলতা বলে। বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য অবশ্য বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনশীলতার হিসেব করতে হয়। একই রকম কাজ কত দ্রুত সময়ে করতে পারবে তার উপর উৎপাদনশীলতা (Productivity) পরিমাপ করা যায়।

সাধারনতঃ প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার যারা অনেক অনেক প্রোজেক্ট করে ফেলেছে, তাদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে একটি সাইট ডিজাইন করে দেওয়া সম্ভব। কারন অনেক টুলস ও কোড তাদের আগে থেকেই করা থাকে। দ্রুত গতিতে কাজ করার সময়ে অনেক সময় আমরা বেশ কিছু টুলস ও সফটওয়্যার ব্যবহার করি। যেমন-

  • ডাটাবেজের ডিজাইনের ঝামেলা এড়াতে সি.এম.এস ব্যবহার করা
  • ছবি সম্পাদনের/কম্প্রেশ করার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার যা অনেক ছবি একসাথে নিয়ে কাজ করতে পারে তা ব্যবহার করা।
  • বিভিন্ন কোড ইডিটর ব্যবহার করা ও ভুল সংশোধনের টুলস
  • অনেক সময় টেকচার, আইকন, লগো, ফন্ট, থিম, টেম্প্লেট, জে-কোয়েরী প্লাগিন ইত্যাদি সংগ্রহে রাখা ও পরে ব্যবহার করা
  • কাজের উপর ভিত্তি করে, খুব দ্রুত গতিতে কাজটি সমাধান করা জন্য অনেক সময় ফ্রিল্যান্স ডিজাইনাররা বেশ কিছু টুল ব্যবহার করে থাকে।
  • একজন ওয়েব ডিজাইনারকে একই সাথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার কাজটি শেষ করতে হয় এবং নান্দনিক একটি ডিজাইনের সাথে ক্লাইন্টের চাহিদা ও নিজের সৃজনশীলতা একসাথে গেথে কাজটি সমাধান করতে হয়।

সৃজনশীলতাঃ


কোন কিছু সৃষ্টি করতে গেলে কিন্তু দ্রুত করা যায় না। বিজ্ঞানীদের কাজের ধারাটা একটু ভিন্ন হয়। অনেক দিন এমন কি বছরের পর বছর গবেষণা করে একটি বিষয় আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। অতি প্রয়োজনীয় অথচ পৃথিবীতে অনুপস্থিত এমন সব আবিষ্কার  যুগ যুগ অনেক মেধার ক্রমবিকাশের ফলে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

বিষয়টাকে এমন ভাবলে চলবে না যে সৃজনশীল ব্যক্তিরা কম কাজ করে। বরং তারা অনেক অনেক বেশি কাজ করে-কাজের ধরনটা ভিন্ন রকমের। একজন উৎপাদনশীল ব্যক্তি প্রতি ঘন্টায় কি পরিমান কাজ হলো সেটার হিসাব করে কিন্তু একজন সৃজনশীল ব্যক্তির হিসাবটা এর চেয়ে অনেক জটিল। তারা তাদের গবেষণার জন্য স্থান, সময়, পরিবেশ এবং গবেষণার উপকণ সমুহকে ধাপে ধাপে যোগার করে কাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

ব্লগ লেখার বিষয়টিকে একটু এনালাইসিস করে দেখা যাকঃ

  • ব্লগ লেখার আগে আমি নিজে একটি সিদ্ধান্তে উপনিত হই যে, এই বিষয়টি আলোচনা করা যেতে পারে। বেশ কিছু বিষয় থেকে আমি লেখার উপকরণ সংগ্রহ করি।
  • বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমি একটু একাকিত্ব খুজে বেড়াই। অফিসের কাজের ফাঁকে অনেক সময় চেয়ারে বসে বা বাইরে একা একা ঘুরে বিষয়টি নারাচারা করি।
  • বিষয়টির সাথে সম্পর্কযুক্ত আরো কিছু বিষয় খুজে পাই, কিছু পক্ষ বিপক্ষ যুক্তিও অনেক সময় খুজে নেই। বিষয়টি যদি ফরমাল বা টেকি বিষয় হয় তাহলে সেটি ওয়েবে সার্চ দিয়ে অন্যের অবস্থান দেখে নেই। বিষয়টি চিন্তাশীল হলে সার্চ দেই না। জনপ্রিয় ব্লগ লেখার কিছু কৌশলও রপ্ত করে নেই।
  • এর পর সময় সুযোগ মতো লিখতে বসি। কখনো লিখতে বসেও ওঠে চলে যাই, লেখাটি শেষ করি না। পরে আবার নতুন কোন চিন্তা যুক্ত হলে সেটা সংযুক্ত করি।
  • লেখাটি শেষ হলে প্রয়োজনীয় ছবি ও লিংক সংগ্রহ করে, বানান চেক করে পোষ্টটি সম্পাদন করি।

ব্লগ লেখার মাঝেও যুক্তি তর্ক সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়- লিংক সংগ্রহ ছবি সংগ্রহ এগুলো উৎপাদনশীলতার মধ্যে ধরা যেতে পারে।

একই সাথে সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতাঃ

ওয়েব ডিজাইনার ও ব্লগার উভয়কেই সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে সমান তালে কাজ করে যেতে হয়। তৈরী করা কোন থিম দিয়ে কাজ চালানোটা প্রোডাক্টিভিটি বলা যায়। আর নিজে একটি ডিজাইন বানানোটা সৃজনশীলতা। আমাদের অবশ্য সৃজনশীলতার দিকে আরো নজর দেওয়া উচিৎ।

একটা ধারাবহিকতা ও সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে কাজ করে গেলে একে অন্যের পরিপুরক হিসেবে কাজ করবে। আশা করা যায় এই লেখাটি ব্লগার ও ডিজাইনার উভয়েরই কাজে দিবে। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।

4 thoughts on “সৃষ্টিশীলতা বনাম উৎপাদনশীলতা”

  1. সময়ের সাথে মানানসই পোস্ট। বেশ ভালো লাগলো। আমার কাজে আসবে। ধন্যবাদ মাহবুব ভাই সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য।

Leave a Comment