নতুন বছরের নতুন ব্লগিং পরিকল্পনা করেছেন কি?

বেশ কিছু দিন ধরে নিয়মিত লিখতে পারছি না। একটা ভিপিএস সারভার নিয়ে বেশ কিছু কাজ করতে গিয়ে অনেকটা দূরত্ব হয়ে গেছে লেখালেখিতে। শুরুতেই সবাইকে নতুন বছরের  শুভেচ্ছা। ২০১০ সালের অনেকেই ব্লগিং এ একটা ধাপ অতিক্রম করেছে। অনেকে নতুন ব্লগও খুলেছে গত বছর। নতুন বছরে ব্লগিং এর বেপারে নতুন কিছু ভেবে নিয়েছেন কিনা? অনেক নতুন নতুন বিষয় এসে পড়ছে বাজারে। ব্লগিং ছাড়া ভিন্ন কোন কিছু চিন্তা করছেন কিনা? অথবা ব্লগিং এর উপর হতাশ বা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত  হয়ে প্রিয় ব্লগটিকে ত্যাগ করার চিন্তা করছেন নাকি?

ব্লগিং এ পরিকল্পনার বেপারে বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলা যাক…

১. পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা

প্রফেশনাল ব্লগারদের ক্ষেত্রে অবশ্যই শিডিউল করে কাজ করে গেলে বেশ সুবিধা হয়। অনেক পরিকল্পনার পরেও দেখা যায় এগিয়ে যাওয়া হয় না। আবার পরিকল্পনা না করে ধিরে ধিরে অনেককে এগিয়ে যেতে দেখি।

২. পদ্ধতি

নতুন বছরটাতে মাস হিসেবে কাজের একাট ধারাবাহিকতা করে নিতে পারেন। এই বছরে কোন মাসে কতটুকু পরিমান কাজ করতে পারবেন তার হিসেবটাই করে নিতে পারেন। পরিকল্পনার সময় নিজের উপরে চাপ প্রয়োগ করা চলবে না, অধিক লেখার পরিকল্পনা করারা চেয়ে ভাল মানের পোষ্ট লেখার বেপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ব্লগিং বিষয়টা এমন নয় যে, চাইলেই বেশি বেশি লিখতে পারবেন। এখানে দক্ষতার প্রয়োজন আছে। আর নিজেকে আরেকটু বেশি দক্ষ করে গড়ে তোলার একটি নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

কাজের সাথে কাজের ফলাফলের একটা বেপারে পরিকল্পনা করতে গিয়ে অনেকে ভুল করে ফেলে।  ‘এই পরিমান কাজ করলে ঐ পরিমান লাভ হবে’- এরকম একটা হিসেবে সমস্যা রয়ে যায়। কাজ বেশি করে বেশি পরিমান ভিজিটর না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কয়েকজনকে ব্লগিং থেকে দূরে সরে যেতে দেখছি।

পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই আগের বছরে কি পরিমান কাজ হয়েছে সেটা দেখে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে নিরপেক্ষ একটা ধারনা নিয়ে নিতে পারেন। বর্তমান সময়ে ব্লগটির অবস্থান আর নতুন সময়ে এগিয়ে যাওয়ার মৌলিক কিছু নতুনত্ব ও সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারেন।

৩. বিষয় নির্বাচন

যারা টেকি ব্লগের সাথে জরিত তারা বেশ কিছু নতুন বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। এ বছরে আলোচিত বিষয় কি হতে পারে তার বেপারে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা সেইভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করে ব্লগ লেখা শুরু করে দিয়েছে। অনেকে আইপ্যাড, HTML5, ওয়েব এপ্লিকেশনের দিকে তাকিয়ে আছে।

বিষয় নির্বাচনের সময় অবশ্যই নিজের দক্ষতার কথা ভেবে নিতে হবে। এমনও হতে পারে যে আপনি CCNA ভর্তি হয়েছেন এবং তাই এর উপরে ব্লগ বানাতে পারেন। এতে করে নিজের বিষয়টির উপরে পড়ালেখাও ভাল হবে সেই সাথে নিজের একটা ব্লগ।

৪. কি কি শিখবেন?

নতুন বছরটিকে শুধুমাত্র ব্লগিং এর পরিকল্পনা করে বেশি কিছু লিখতে পারবেন বলে মনে হয় না। অনেকে খুব সামান্য জ্ঞান নিয়ে সেই বিষয়ে ব্লগ খুলে লিখতে বসে এবং অনলাইনে সার্চ ইঞ্জিনের মাথায় চড়তে চায়। প্রথমিক বিষয়গুলো যে লেখা যাবে না তা নয়। তবে ধিরে ধিরে নিজের জ্ঞানের পরিসীমাকে যত বেশি এগিয়ে নিতে পারবেন তত বেশি জানতে পারবেন যে “কত কিছুই যে শিখা হয় নি”।

যে যেই বিষয়টি ভালবাসেন সেই বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করতে পারেন। অনেকে ওয়েব ডেভলপমেন্টে এগিয়ে যেতে চায়। টিউটোরিয়ালবিডিতে প্রাথমিক লেভেলের পাঠকদের জন্য বেশ কিছু টিউটোরিয়াল রয়েছে। অনলাইনে বা বই পড়ে অনেক কিছু শিখা সম্ভব হয় না। প্রয়োজনে কোন ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন। হাতে কলমে শিখে নিতে পারেন। টিউটোরিয়ালবিডিতে মতামত দিলে সমাধারনত উত্তরে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তাই এগিয়ে যেতে আমরা সহায়তা করবো।

কেউ প্রোগ্রামিং, মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভলপমেন্ট বা ভিন্ন কিছু শিখতে চাইলে সেই দিকে যেতে পারেন। নিজের আগ্রহটাকে বেশি দিন ধরে রাখার চেষ্টা করুন। আর সবার পক্ষে সব কিছু সম্ভব নাও হতে পারে। কেউ কেউ জন্মগতভাবে কর্কশ কন্ঠস্বরের হয়, সারা জীবন চেষ্টা করলেও সে ভাল কন্ঠশিল্পী হতে পারবে না। তাই অবশ্যই বুঝে নিতে হবে কোন পথে এগিয়ে যাবেন।

৫. চ্যালেঞ্জ

ব্লগিং এখন আগের মতো নেই। একটি টেকি খবর প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে কয়েক’শ একই খবরের এনালাইসিস পোষ্ট চলে আসে ব্লগে ব্লগে। ব্লগিং দিন দিন অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা অবশ্য একটা সুযোগ, অনেক রকমের প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকলেও ব্লগে এসে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারি। তাই ব্লগিং এর প্রফেশনাল দিক ভেবে এগিয়ে যেতে হবে।

৬. ব্লগ থেকে সরে যেতে চাইলে কি করবেন?

অনেকে কিছু দিন ব্লগিং করে নিজের সময়ের অভাবে অথবা অন্য কোন কারনে ব্লগিং থেকে একাবারে বিদায় নেয়। অধিকাংশের ক্ষেত্রে “ব্লগিং এ সফলতা পাওয়া একটা কঠিন কাজ” বলে মনে করে চলে যায়। যারা ব্যক্তিগত ব্লগ লিখেন তারাও একসময় এটাকে সময় অপচয় হিসেবে ধরে নিয়ে ব্লগকে গুড বাই দিয়ে চলে যায় এবং মাঝে মাঝে দেখে নেয় অন্যের ব্লগ। অনেকে ডেভলপার বা অন্যকোন আয়ের সন্ধানে বেশি সময় দিতে গিয়ে ব্লগিং ত্যাগ করে ফেলে মনের অজান্তে..সময়ের অভাবে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে একেবারে ব্লগ ছেড়ে না যেতে বলবো। প্রয়োজনে ব্লগে একটু কম সময় দিয়ে, ধিরে ধিরে এগিয়ে যেতে পারেন। সফলতার অনেক রকম মানে আছে। কেউ টাকা কামাইটাকে সফলতা মনে করে, কেউ সুনামটাকে সফলতা ভাবে কেউবা আত্নতৃপ্তিটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

আশা করা যায় নতুন বছর সবাইকে নতুন করে ভাবতে শিখাবে… এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে এখানেই শেষ করছি।

আরও পড়ুন প্রয়োজনীয় কিছু ব্লগিং পোষ্টঃ

শব্দ- কথা, ভাব ও ভাষাঃ ব্লগিং এর সাথে যোগ সূত্র

ব্লগ প্রোমশনের বেশ কয়েকটি ঐচ্ছিক পদ্ধতি

ব্লগে শব্দের ও ভাষাগত সচেতনতা

ভাল ব্লগারগণ বেশ কিছু বিষয় অনুসরণ করে থাকেন

ছোট ব্লগ পোষ্টকে কি নিন্মমানের পোষ্ট বলা যায়?

দ্রুত দৌড়ানো ব্লগারের কাজ নয়

মনে রাখার মতো ব্লগ পোষ্ট লিখবেন কিভাবে?

3 thoughts on “নতুন বছরের নতুন ব্লগিং পরিকল্পনা করেছেন কি?”

Leave a Comment