ফ্রীল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জনঃ স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা

ফ্রিল্যান্সিং এর বেপারে অনেকের ব্যাপক আগ্রহ থাকার কারন, তারা মনে করে বিশ্ব বাজারে কাজের অভাব নেই আর ফ্রীল্যান্সিং এর কাজ পথে-ঘাটে, গাড়ীতে, রাস্তায় বসেও করা যায়। নিজেই নিজের বস তাই কেউ কিছু বলার নাই। টাকাও পাওয়া যায় অনেক – ইত্যাদি অনেক কিছু। আসলে বাস্তবতাটা কি তাই? বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সাথে কথা বলে এবং তাদের ব্লগ পড়ে জানতে পারলাম, আসলে এ জন্য তাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আর এ ব্যাপারে আজকের আমার এ আলোচনা ধর্মী পোস্ট যার কিছু অংশ Laura Spencer এর একটি লেখা থেকে সম্পাদনা করা হয়েছে।

ডার্কলর্ড তার ব্লগে ফ্রিল্যান্সিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন-তা এখানে উল্লেখ করা হলো:

“ম্যাগাজিনে জাকারিয়া ভাইএর লেখা দেখে প্রথম ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে জানলাম। ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করবো ভাবতেই অন্যরকম লাগছিলো। যা হোক ওগুলোর মধ্যে আমার getafreelancer.com সাইটটি overall ভালো লাগলো। তাই রেজিষ্টার করে ফেললাম। করেই ঘাটাঘাটি শুরু করলাম কোন কাজের জন্য বিড করা যায়। বিড করলামও কিছু প্রজেক্টে ( আমার প্রাফিক্স ডিজাইনিং এবং ফটো রিটাচিং এ হাত রয়েছে তাই সেগুলোতে বিড করলাম )। এর পর অপেক্ষা কবে কাজ পাবো। ১দিন জায় ২দিন যায় এমন করে দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেল কাজ পেলাম না কোন :( মন খারাপ হল। তবে হাল ছাড়িনি যে কাজ গুলো আমার পক্ষে করা সম্ভব সেগুলোতে বিড করেই গেলাম এবার একটা পদ্ধতি অনুসরণ করলাম । দেখলাম প্রজেক্টে যারা বিড করেছে তারা গড়ে কত মূল্য চেয়েছে তাদের থেকে কম মূল্যে আমি বিড করলাম এবং ক্লায়েন্ট কে PM (Private Massage) তার এটাচকরা সেম্পল ইমেজ কে রিটাচিং করে আমার Best কাজটি বায়ারকে এটাচ করে পাঠালাম।
…..
একদিন হঠাৎ PM এ বায়ারের রিপ্লাই পেলাম যে আমার কাজ তার পছন্দ হয়েছে এবং আমার Bidding amount ও। ব্যাস রাজি হয়ে গেলাম। বায়ার পেমেন্ট এস্ক্রো করে দিল (এটা সাইটের একটি ফিচার যা কাজ শেষে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয় বিস্তারিত জাকারিয়া ভাইএর ব্লগে দেখুন) ব্যাস কাজে লেগে পড়লাম যাতে বায়ারের ডেডলাইনের আগেই কাজ কম্প্লিট করতে পারি। এক সময় কাজ শেষ হল, তা ডেডলাইনের আগেই এবং বায়ারের স্ক্রো করা পেমেন্ট পেয়ে গেলাম।”

ফ্রিল্যান্সারের স্বপ্ন ও বাস্তবতার তুলনামূলক আলোচনা

ফ্রিল্যান্সার মনে করে এই কাজগুলো খুবই সহজ হয়ে থাকে। আর কাজের নিয়ন্ত্রণ নিজেরই তাই বেপারটা খুব সিরিয়াস না। কিন্তু বাস্তবতাটা সেরকম না। আমি নিজে একই সাথে চাকরীর পাসাপাসি কিছু ওয়েব ডিজাইন আর কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ করি সেই সাথে এডসেন্সের সামান্য আয়। বাস্তবতার সেই দিক থেকেই তুলনামূলক আলোচনা।

১. ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমাকে অল্প কয়েক ঘন্টা কাজ করলেই চলবে:

অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাসাপাসি ফ্রিল্যান্সিং করার আগ্রহ অনেক বেশি কারন এখানে সামান্য কাজ করতে পারলেই ভাল আয়। প্রকৃত বেপারটা এমন না এজন্য বলি যে, আমি বেশ কয়েক জনকে জানি যারা দিনে প্রায় ১২-১৪ ঘন্টা অনলাইনে থেকে কাজ করছেন। অথচ চাকরী করলে তাকে এত সময় দিতে হতো না।

২. ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমি আমার পছন্দের কাজটিই করবো:

নিজের পছন্দের কাজটি নিজে করার স্বাধীনতা থাকলেও অনেক সময় দেখা গেল – কাঙ্খিত কাজটি পাওয়া গেল না। বা একটি উদ্ভট কাজ এলো যা হয়তো পরিচয়ের খাতিরে করে দিতে হবে।

৩. ফ্রিল্যান্সার হওয়ায় বিভিন্ন ঝামেলার মানুষের সাথে মিসতে হবে না:

অনেকে এটা মনে করে কিন্তু কয়েকদিনের বেশ কিছু মানুষের প্রোজেক্ট করতে গিয়ে বুঝেছি যে, নিজেকে অনেক কিছুই সামলে নিতে হয় । যা হয়তো চাকরী জীবনে করা দরকার হয় না। চাকরী জীবনে কয়েকটা দায়িত্ব থাকে কিন্তু এই কাজে নিজেকে নিতে হয় সব দায় ভার।

৪. যে কোন সময় ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দিয়ে চাকরীতে যোগ দান করা যাবে:

আমি মনে করি আপনি যে কোন সময়ই নিজের কাজটাকে বদলে নিতে পারেন। তবে একজন চাকরীজীবি যত সহজে চাকরী টা পরিবর্তন করতে পারে একজন ব্যবসায়ী তত তারাতারি পারে না। এটা ঠিক যে, ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে পারেন চাকরী জগতে কিন্তু আপনার চলমান প্রোজেক্টগুলোর কি হবে? যে সব ক্লাইন্টদের সাথে কাজ করেছিলেন তাদের সাপোর্টের বেপারটা কিভাবে দেখবেন। এরকম অনেক দায় চলে আসে। অবশ্য এরকম পরিস্থিতি যাদের হয় তাদের Full time Job এর প্রয়োজন হয় না।

আমি মনে করি,অনলাইনে টাকা আয়ের বেপারটা কোন আবেগপূর্ণ বিষয় না এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে নিজের মেধা অর্জনের চেষ্টা আর ধর্য্য সহকারে কাজ শুরু করলে সফলতা আসবেই – কারো হয়তো কম সময় লাগবে কারো একটু বেশি সময় লাগবে ….

4 thoughts on “ফ্রীল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জনঃ স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা”

  1. ঠিক করে রেখেছিলাম আজ বন্ধের দিন । আপনি ফ্রি থাকবেন …
    আপনার সাথে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কথা বলবো…
    সকালে উঠৈই দেখি আপনার পোষ্ট
    এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি…

  2. @ShajjadBD : ধন্যবাদ সাজ্জাদ ভাই। আমার অবশ্য বন্ধের দিন না। শুক্রবারে কাজ থাকে। সপ্তাহে অন্য এক অন্য দিন ফ্রি। আপানর সাথে ফেসবুকে দেখা হবে। আশা করি এ বেপারে সামনে আরও তিন চারটা পোস্ট পাবেন। আমি লিখে রেখেছি। শুধু প্রকাশের পালা। 😀

Leave a Comment