বিভিন্ন কারনে পৃথিবীর তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারনে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভয়াবহ সমস্যার সম্মুক্ষিণ হতে হবে আমাদের।
খনিজ জ্বালানী পুরে প্রতিনিয়তই তৈরী হচ্ছে গ্রীণ হাউস গ্যাস। এই গ্যাস ওজন স্তর নষ্ট করে দিচ্ছে যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারন। ধারাবাহিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি চলতে থাকলে প্রত্যাহিক জীবনে যে সব পরিবর্তন হবে তার কিছু আলোচনা করা হবে-
সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে সাথেই থাকুন।

১. তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কৃষিঃ
সূর্য সূর্যালোক থেকে তাপ দিনের বেলা আসবে এবং রাতের বেলা বিকিরিত হয়ে চলে যাবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেন ও ক্লোরো-ফোরো-কার্বন(CFC) ইত্যাদি গ্যাস কাচের মতো আটকে ফেলে সূর্যের তাপ। পৃথিবীতে আসা সূর্যের তাপের একটা অংশ বিকিরন হতে বাধা প্রাপ্ত হয়।
কল কারখানা থেকে অবাধে কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেন ও ক্লোরো-ফোরো-কার্বন(CFC) নি:সরন হচ্ছে। দিন দিন বাতাসে কাবর্ন-ডাই অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
সাধারনত গরমকালে সবোর্চ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। বেশি গরম অঞ্চলে ৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। শতাব্দির পর শতাব্দি একই রকম তাপমাত্রা চলে আসছে। কিন্তু ইদানিং হঠাৎ করেই তাপামাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা কৃষি এবং সভ্যতার পরিবর্তন ঘটিয়ে দিবে।
প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে (একই জিনিস একই পদ্ধতিতে চাষ করলে) শস্য উৎপাদন ১০% পর্যন্ত কম হতে পারে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কৃষকদের চাষকৃত পন্যের পরিবর্তনও হয়ে যেতে পারে যার ফলে খাদ্য সৃঙ্খলেও তা প্রভাব ফেলবে। অনেক জাতের ফসল ও সেই ফসলের সাথে সম্পৃক্ত প্রানীও মারা যাবে। কোন ফসল উৎপাদন কম হলে কৃষক অন্য ফসল চাষ শুরু করবে। যখন যেটা চাষ করার দিন ক্ষণ ছিল তা পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

২. মরুময়তা
নতুন করে মরুভূমিতে পরিনত হবে অনেক অঞ্চল। বাতাসে জ্বলীয় বাস্পের পরিমান কমলে, মাটি শুকিয়ে গেলে। বৃক্ষ ও গুল্ম মাটিতে পানি ধরে রাখে। যে গাছ যে অঞ্চলের তাপমাত্রার সাখে খাপ খেয়ে ছিল সে গাছ মরে গেলে মরুতে পরিনত হবে। মরুভূমি হওয়ার জন্য ইউরুপ বেশি হুমকিতে আছে, আফ্রিকায়ও এর প্রভাব পরবে।

৩. খরাঃ
প্রচন্ড খরা এবং ফসল না হওয়ার অবস্থা কাছে চলে আসবে। মাটি ফেটে চৌচির হবে। ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। একে তো গাছ কাট হচ্ছে আরেক দিকে ভূগর্ভস্ত পানি বিভিন্ন শিল্প কারখানায় খরচকরে মানির স্তর নিচের দিকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফলে চরম খরার মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।

৪. খরার ফলে দাবানলের সম্ভাবনা বাড়বেঃ
বাতাসে পানির কনা না থাকায়। বাতাসের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। উচ্চ তাপমাত্রার সময় এখনই অনেক এলাকার বনাঞ্চলে দাবানল লেগে যায়।
যে সব অঞ্চলে অনেক বনাঞ্চল রয়েছে সে এলাকায় দাবানল হলে বিশাল বন উজার হয়ে যেতে পারে।

৫. মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া এবং সেখানের পরিবেশে প্রভাব
মেরু অঞ্চলের বরফ বেশি পরিমান গলে গেলে বড় ধরনের প্রভাব পরবে। গ্রীষ্ম কালে বরফের উচু উচু খন্ড গলে যাবে যা সমুদ্রের পানিতে মিশে কয়েকটা ঘটনা ঘটবে-
ক. সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। যে সব বরফ কখনোই গলে নাই তার একটা অংশ গলে সমুদ্রের পানিতে মিশে যাবে।
খ. সমুদ্রের নোনা পানিতে অধিক মিষ্টি পানি যোগ হবে। পিএইচ বেড়ে যাবে। সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রানীর ইকোলজীক্যাল পরিবর্তন হবে।
গ. ইদানিং মেরু অঞ্চলে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। অনেকেই ভ্রমনে যায়। তাদের ভ্রমনের দূরত্ব কমে যাবে। কারন তাদের বড় বাধা বিভিন্ন জায়গায় জমাটকৃত বরফ গলে যাবে।
ঘ. বিভিন্ন জাহাজের যাতায়াতের সময় বর্জ তেল পানিতে মিশে যাচ্ছে। আর এই তেল পানির উপরের অংশে ভেসে থাকে এবং সামুদ্রিক পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি করে। এই ক্ষতিও দিন দিন যোগ হবে।
ইতো মধ্যে সেখানে এক ধরনের গাছ তার পরিমান বাড়ছে। পানি পাওয়া যাওয়ায় হয়তো এটা হচ্ছে। এডিলি পেঙ্গুইনের পরিমান কমছে এবং গ্যান্তো প্যাঙ্গুইনের পরিমান বাড়ছে। ক্রিলের পরিমান অনেক কমেছে।

৬. সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং নিচু অঞ্চল ডুবে যাওয়া
সমুদ্রপৃষ্ঠের বরফ পানি হয়ে সমুদ্রের পানিতে মিশে যাবে। আমরা জানি ঠান্ডা পানির চেয়ে গরম পানির ঘনত্ব কম। ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সর্বোচ্চ ঘনত্ব। আর তাই তাপমাত্রা বাড়লে পানির আয়তনও বাড়বে। তাই নিচু জায়গা বিশেষ করে সমুদ্রের কাছের এলাকা ডুবে ডাবে। ভূ-পৃষ্ঠের পরিমান কমে যাবে।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশ বিলীনও হয়ে যেতে পারে। যদিও বাংলাদেশের অনেক অংশে পলি পরে অনেক নতুন চর জেগেছে।

৭. বায়ু দুষণঃ
মানুষের নিত্যদিনের চাহিদা মিটাতে শিল্প কারখানার বর্জগুলো যতটা না পানি ও মাটি দুষণ করছে তার চেয়ে বেশি করছে বায়ু দুষণ।
কয়লা, গ্যাস ও খনিজ তেল পুরে রেডিয়েশন বাড়াচ্ছে। আবার গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গত করছে যা বাতাস ও জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে গিয়ে আবার মাটিতেই পড়ছে। নিঃশাসে ভারী গ্যাস মারাত্বক রোগ হচ্ছে।
ওয়ালর্ড হেলথ অরগানাইজেশনের মতে ৪০% মৃত্যুর সাথে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বায়ু দুষণের সাথে জড়িত।
৮. উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে খাবারের দাম বৃদ্ধিঃ

৯. রোগ-বালাই বৃদ্ধিঃ
গ্লোবাল মাইগ্রেশন বড় ধরনের রোগ-বালাই এর ঝুকির কারন। আর মাইগ্রেশনের অন্যতম কারন জলবায়ু পরিবর্তন।
মানুষ ও পশুপাখির অবস্থান পরিবর্তনের অনেক কারনগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনও একটি। যোগাযোগ সহজ হওয়ার উত্তরের মানুষ ও পশু-পাখি দক্ষিনে, আবার দক্ষিনের প্রানী উত্তরে যাতায়াত করে। অনেকে শীতের সময়, অনেক দেশের লোক গরমের সময় ভিন্ন দেশে বেড়ায়। গরম বেড়ে গেলে এই ভ্রমনও বাড়ছে। ফলে যেসব রোগ বালাই আগে নির্দিষ্ট একটা এলাকায় ছিল তা ছড়িয়ে গেছে।
জিকা, রিফ্ট ভ্যালি ফিভার, ডেঙ্গু জ্বর, চিকুনগুনিয়া, ক্রিপ্টোকোকাস গাট্টি ফাঙ্গাস এবং ছাগাস ডিজিস বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে।

১০.সামুদ্রিক পরিবেশের তিন ধরনের পরিবর্তনঃ
- ক. সমুদ্রের পানির পিএইচ পরিবর্তন এবং জলজ প্রানীর মৃত্যু হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি পরিবর্তন হয়েছে।
- খ. পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাবে।
- গ. ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন এবং খাদ্য চক্র নষ্ট হয়ে যাওয়া। অনেক সামুদ্রিক প্রানীর এক সাথে মৃত্যু।
১১. সুনামি ও ভূমিকম্পঃ
বরফের সীটগুলো গলে গেলে একটা আরেকটার উপরে পরবে। আর নিচের প্লেটগুলোও ভেঙে যেতে পারে। ফলে ভূমিকম্প হওয়া অসম্ভব না। সমুদ্রের ভূমিকম্পের ফলে তীরে বড় ধরনের সুনামী হওয়াও অসম্ভব নয়।
এসব অনেক সরাসরি পরিবর্তন। কিন্তু পারিপার্শিক অনেক ধরনের পরিবর্তনই হবে। অনেক ধরনের উদ্যোগ নিয়েও বায়ুদুষণ কমানো যাচ্ছে না। যেহেতু শিল্পোন্নত দেশগুলোই দুষিত বায়ু নির্গত করছে এবং সারা পৃথিবীকেই বসবাসের হুমকিতে ফেলছে-এ জন্য অনেক ধরনের সামাজিক ও আর্ন্জাতিক আন্দোলন হচ্ছে।
তথ্য সূত্রঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/Global_warming_in_Antarctica
https://www.joboneforhumanity.org/20_worst_consequences_of_global_warming
https://www.coolantarctica.com/Antarctica%20fact%20file/science/global_warming.php