স্বপ্ন, বাস্তবতা, আমাদের জীবন এবং বিজ্ঞান

স্বপ্ন বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথে সরাসরিভাবে যুক্ত না হলেও মনোবিজ্ঞান তথা সাইকোলজিতে বেশ আলোচিত একটা বিষয়। মনোবিজ্ঞানীদের কাছে এখনো এটা গবেষণার অন্যতম বিষয়বস্তু। স্বপ্ন, স্বপ্নের কারণ, স্বপ্নের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করার জন্য বিশ্বজুড়ে চলছে নানা ধরণের গবেষণা। এবং এটা নাকি মানুষের জীবনে বিশেষ অর্থ বহণ করে।স্বপ্নের মধ্যে আবেগ, তথ্য ও তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে এবং স্বপ্নে মানুষের স্বভাব, আচরণ এবং ইচ্ছা এবং আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে।অনেক বিজ্ঞানী তার গবেষণার সফলতা স্বপ্নের মাধ্যমে পেয়েছেন, জানা যায় বিজ্ঞানী নিলস বোর নাকি পরমাণুর গঠন স্বপ্নের মাধ্যমেই দেখেছিলেন । এছাড়া বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গাঠনিক স্ট্রাকচার স্বপ্নের একটি ঘটনা  থেকে বের করেছিলেন।অনেক লেখক তার স্বপ্নের বিষয়বস্তুকে সাহিত্যে অন্তর্ভূক্ত করে সফল হয়েছেন।

আমাদের পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ঘটে , যা ঐ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। মনে হতে পারে বিষয়টিকে বিজ্ঞান দ্বারা বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় অথবা বিষয়টির কোন অর্থ নেই।এধরণের ঘটনা আপনার বাস্তব জীবনে ঘটতে পারে অথবা স্বপ্নেও হতে পারে।যার প্রভাব অনেক সময় আমাদের বাস্তব জীবনের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক গতিকে পরিবর্তন করতে পারে।বিভিন্ন ধরণের মানষিক এমনকি শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, ভীতির সঞ্চার হতে পারে আবার অনেক ভাল ফলাফলও হতে পারে যেমন নতুন উদ্দম ও সাহস অথবা কৌতুহল সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে, নতুন পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করতে পারে, অথবা আপনি নতুন কোন গবেষণার বিষয় পেয়ে যেতে পারেন।

একটা অন্যরকম বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

গত ১৭ তারিখে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET) এর ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স(EEE) ডিপার্টমেন্টের নবীন বরন এবং প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠান হয়ে গেল। EEE ডিপার্টমেন্ট এর একজন নবীন ছাত্র হিসেবে সারাদিন আমিও অনেক মজা করেছিলাম আমার ক্লাসমেট, বড়ভাই এবং স্যারদের সাথে। সন্ধার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং শেষ হতে হতে প্রায় রাত ৩ টার মত বেজে যায়। সব মিলিয়ে স্বরণীয় করে রাখার মত একটা দিন পার করেছিলাম।

পরদিন ছুটির দিন ছিল, তাই বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছিলো না।এক বড়ভাই এর ফোন পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। উনাকে ইলেকট্রনিক্সের পি সি বি লে আউট তৈরির ব্যপারে একটু সাহায্য করতে হল।ভাই চলে যাওয়ার পর কিছু খাওয়া দাওয়া করলাম।ভাবলাম লেখাপড়া করা দরকার, কিন্তু শরীরে প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করলাম।বিছানায় একটা বই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি।ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নটা আমার কাছে বেশ কিছু কারণে অন্যরকম মনে হয়েছে।

স্বপ্নে যা দেখেছিলাম

গাজিপুর আছি প্রায় ৩ বছরের মত হবে। আমি এর মাঝে শুধু মাত্র একবার বাসা পরিবর্তন করেছি। স্বপ্নের ঘটনাটা না বলেই অনেক কিছু বলে ফেলেছি। এখন আসা যাক স্বপ্নে আমি কি দেখেছিলাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম কোন একটা কারণে আমি আমার দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আমি আমার বর্তমান বাসটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি একটা বাসায় যায় এবং একটা তালা বদ্ধ রুম কোনভাবে খুলে যায় দেখি চারিদিকে মারড়সার জাল। কিন্তু মনে হল রুমটা আমার পরিচিত।যা হোক রুমে এ বেহাল দশা দেখে আমি দ্বিতীয় তলায় চলে যায়, একই ভাবে দ্বিতীয় তলায় একটা রুম খুলে ফেলি, এই রুমেই আমার সব জিনিসপত্র রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এমন সময় দুইটা লোক রুম ভাড়া নেয়ার জন্য বাড়িওয়ালার সাথে আমার রুমে আসলেন রুমটা দেখার জন্য।দেখলাম বাড়িওয়ালা লোকটি আর কেউ নন, আমি আগে যে বাসায় থাকতাম সেই বাসার মালিক।

আমি সবকিছু বুঝতে পারলাম, কিন্তু নতুন সমস্যা তৈরি হয়ে গেল। আমি চিন্তা করছিলাম আমি বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে এ বাড়িতে এসে উঠেছি,বাড়িওয়ালা আঙ্কেল তো আমাকে খালি খালি ছারবে না। আমি ক্যালকুলেশন করছিলাম অনেকটা ম্যাথ সলিউশন করার মত, কিভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব। চিন্তা করলাম যেহেতু এখানে এসেই পড়েছি, এখানেই একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিই আর আগেরর বাসাটা ছেড়ে দেয়া যাবে। তাই বাড়িওয়ালাকে সাথে নিয়ে অন্যরুম গুলো দেখার জন্য গেলাম, কিন্তু আমার কাছে বাড়ির স্ট্রাকচার এবং চারপাশের পরিবেশ বেশ অন্যরকম মনে হল। আমি আগে যখন ঐ বাসায় ছিলাম বাসাটা ২ তলা পর্যন্ত ছিল কিন্তু আমার কাছে স্বপ্নের বাড়িটা বেশ পুরোনো আর ৩ তলার মনে হল,কিন্তু বাড়িওয়ালা তো ঠিক আছে।যা হোক আমার ৩য় তলার একটা রুম পছন্দ হল।রুমটার একটা জানালার সামনে একটা গাছ ছিলো। আমি একটু স্বাধীনচেতা আর বেশ অগোছালো মানুষ, তাই আঙ্কেলকে বললাম, রুমটা আমি একা নিতে চাই।আঙ্কেল আমাকে রুমের ভাড়া খুব কম চাইলেন কিন্তু উনি আমার একা থাকার জন্য ঐ রুমটা ভাড়া দিতে রাজি নন। আমি কারণ জানতে চাইলে বললেন।

“এই রুমটাতে তোমারই মত একটা ছেলে উঠেছিল। ছেলেটা বেশ মেধাবী ছিল। সারাদিন লেখাপড়া আর লেখালেখি নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো। হঠাৎ একদিন আমরা দেখি ছেলেটা গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

এর পর………………………….

আমি এখনো প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজছি

  • আমি যা দেখেছি, তা নিয়ে আগে কখনো ভাবিনি। তাহলে কেন এমন একটা স্বপ্ন দেখলাম?
  • আমার বাস্তব জীবনে এর কি কোন অর্থ আছে?
  • স্বপ্নটি কি ভবিষ্যতের কোন বার্তা বা আধ্যাত্মিক কোন নির্দেশনা প্রকাশ করে?
  • আমি আগে ঐ বাসায় ১ম নিচতালার একটা রুমে ছিলাম, তারপর ২য় তালার একটা রুমে ছিলাম। স্বপ্নের মধ্যেও দুটো রুমে আমি গিয়েছি এবং কোনভাবে তালা খুলে গিয়েছিল, কিভাবে?
  • বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের সাথে গত ছয় মাসে আমার একবারও দেখা হয়নি, তাহলে সে কেন আমাকে এমন একটা ঘটনা বলল?
  • এই ঘটনাটা কি প্রকাশ করে?
  • ঘটনাটি শেষ হতে না হতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কেন?

হয়তবা এই প্রশ্ন গুলোর কোন উত্তর নেই, অথবা কারো কাছে এর অর্থ ধনাত্নক আবার কারো কাছে ঋণাত্নক আর এটাই হয়তবা স্বপ্নের সবচেয়ে অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য। আমরা সবাই জানি স্বপ্ন বাস্তব নয়, কিন্তু অনেকেই ভালো কোন স্বপ্ন দেখলে সেটাকে মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে প্রার্থনা করে, বাস্তবে রূপায়িত হোক স্বপ্নটি। আসলে মানুষ স্বপ্ন প্রিয়। আর এক ধরণের মানুষ আছেন যারা কিছু স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকে আজীবন, আর স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়……………………………..। আসুন আমরা স্বপ্ন দেশি সুন্দর একটা আগামীর, সুন্দর একটা সকালের, যে সকাল হবে দু:খ-দুর্দশা,দুর্নীতি আর সন্ত্রাস মুক্ত।

………………………………………………………..

 আজ এখানেই শেষ করছি। সকলের জন্য শুভকামনা রইল।আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

Leave a Comment