মার্চেন্ডাইজিং পেশা হিসেবে সম্ভাবনাময়

মার্চেন্ডাইজিং পেশা হিসেবে সম্ভাবনাময়

তৈরি পোশাকশিল্পে (রেডিমেড গার্মেন্টস-আরএমজি) বাংলাদেশে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। এই শিল্পে পেশা বলতে উৎপাদনবিষয়ক কাজগুলোই আমাদের কাছেবেশিপরিচিত হলেও এখানে অন্য বেশ কিছু ধরনের কাজের সুযোগও রয়েছে। পোশাকশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণযেমন গুরুত্বপূর্ণ, ব্যবসায়িক স্বার্থে এর উপস্থাপনাটাও বেশ দরকারি। সেই সঙ্গে আছে পারিপার্শিক আরও কিছু বিষয়। পোশাকের আমদানিকারকেরা এখন শুধু পণ্যই দেখে না, পণ্যের পাশাপাশিঅন্যান্য দিকে মানগত বিষয়ে ওদের কিছু চাহিদা থাকে।
ভাবতেই ভালো লাগে, আমাদের দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বিদেশে প্রচুর। এর চাহিদা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি পোশাক কারখানাতেই অভিজ্ঞ মার্চেন্ডাইজার দরকার রয়েছে। এ কারণেই মার্চেন্ডাইজিং চাহিদাসম্পন্ন একটি পেশা। এ পেশায় রয়েছে যথেষ্ট আয়ের সুযোগ। তাই এ পেশার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন।
মার্চেন্ডাইজার ও মার্চেন্ডাইজিং কী?
একজন মার্চেন্ডাইজার তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তাঁর দায়িত্ব অপরিসীম। সোজা কথায় পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারে বিপণন, বিক্রি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াগুলো যিনি নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে তত্ত্বাবধান করে থাকেন তিনিই মার্চেন্ডাইজার। আর এ প্রক্রিয়া বা পেশাকেই বলা হয় মার্চেন্ডাইজিং। এটি যথেষ্ট সম্মানজনক ও আকর্ষণীয় এবং এর বেতনও অন্যান্য পেশার তুলনায় বেশি। টেক্সওয়েল নামে একটি মার্চেন্ডাইজিং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মার্চেন্ডাইজার নিরঞ্জন ভৌমিক (নিরু) বলেন ‘অনেক পেশা থাকতে এ পেশায় আসার অন্যতম কারণ, পেশাটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং এবং বেতনও অনেক।’ তবে তিনি বিশেষ করে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কদরই বেশি।
চাকরির ক্ষেত্রে
তৈরি পোশাক শিল্পকে একটা লাইফলাইন বলা যায়।কারণ, মার্চেন্ডাইজিংয়ের প্রধান চাকরির ক্ষেত্র হলো আরএমজি খাত।দেশের দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি এ ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন।
বর্তমানে আমাদের দেশে চার হাজারেরও বেশি তৈরি পোশাক কারখানা আছে। অতএব খুব নিশ্চিত করে বলা যায়, কারও যদি এই বিষয়ে ডিগ্রি এবং প্রশিক্ষণ থাকে তাহলে শুরুতেই আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা নিয়ে যেকোনো পোশাক কারখানায় চাকরি পাবে। তা ছাড়া দ্রুত পদোন্নতির সম্ভাবনাও রয়েছে। বাইরের দেশগুলোও আমাদের দেশ থেকে এ খাতে কাজ করার জন্য জনশক্তি রপ্তানি করে থাকে। সে ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনে বাইরের দেশগুলোতেও কাজ করতে পারার সুযোগ থাকে।
আমাদের দেশে সম্ভাবনা
আমাদের দেশে এ পেশার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এখন বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য হলো আমাদের তৈরি পোশাক।উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আমাদের দেশের গার্মেন্টস পোশাকের ভালো চাহিদা থাকায় এবং কোটাপ্রথা উঠে যাওয়ায় সবাই এখন ভালো কাজের দিকে মনোনিবেশ করছে। আর ক্রমেই বাড়ছে মার্চেন্ডাইজারদের চাহিদা।
পড়াশোনা
আমাদের দেশে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানে মার্চেন্ডাইজিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিজিএমইএ, ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএফটি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন (বিআইডি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন ডিজাইন (এনআইএফডি) ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানে চার বছরের স্মাতক (সম্মান) ডিগ্রি, এক বছরের ডিপ্লোমা এবং ছয় মাসের সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। চার বছরের স্মাতক (সম্মান) ডিগ্রির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ভর্তি হতে হবে। বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় প্রশাসনসহ সব বিভাগের ছাত্ররাই এ বিষয়ে পড়তে পারবেন। আর এ জন্য আপনার খরচ হবে ৩০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে কোর্স অনুযায়ী এ টাকার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
সব শেষে বলব, আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে আপনিও বেছে নিতে পারেন মার্চেন্ডাইজিং পেশা।

কৃষ্ণ কুমার সাহা
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৬, ২০০৮

2 thoughts on “মার্চেন্ডাইজিং পেশা হিসেবে সম্ভাবনাময়”

  1. তানিম

    মার্চেন্ডাইজিং এবং এ্যাপারাল গার্মেন্টস সম্পর্কিত বাংলা বই থাকলে জানাবেন।

Leave a Comment