শব্দ- কথা, ভাব ও ভাষাঃ ব্লগিং এর সাথে যোগ সূত্র

অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে প্রকাশের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। মানুষের মনের কথাটিকে একেবারে সঠিক উপায়ে আরেকজনের কাছে পৌছে দেওয়া একেবারে সহজ না। প্রকাশ ভঙ্গির কারনে একই বিষয় নানান রকম মনে হতে পারে। আদি কাল থেকে আজ এই তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের দিন পর্যন্ত মানুষের প্রকাশভঙ্গির বিশাল পরিবর্তন দেখা যায়। কখনো কখনো মূল ঘটনা বা বিষয়বস্তুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে প্রকাশ করার পদ্ধতিটি। আর সবচেয়ে মজার এবপার হলো প্রকাশভঙ্গির মাধুর্যটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যুগে যুগে যত ধরনের পরিবর্তনই আসুক বা না আসুক সৃজনশীল তথ্যের প্রকাশভঙ্গি মানুষকে অন্যের কাছ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য এনে দেয়।

শব্দঃ

ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কথা বলাটাই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং সুবিধা জনক। কখনো কি এ জিনিসটি লক্ষ্য করেছেন যে, কিছু লোকের কথার মধ্যে থাকে একটু ভিন্নতা-কেউ একটু গম্ভির হয়ে কথা বলে, কারো কথা আপনি সহ অনেককে হাসায়, আবার কারো কথার মধ্যে থাকে ব্যাপক সাহিত্য ও চিন্তাবোধ।
শব্দ
কিছু ছেলে মেয়ের সাথে প্রেম বিষয়ক কথা একটু বেশি আলোচনা করা শুরু করতাম। প্রেমের শুরু, মাঝামাঝি, সম্পর্কের গভীরতা, ঝামেলা, বিয়ে, বিয়ের পরের সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আড্ডা চলতো নিয়মিত। এক সময় তারা আমাকে দেখলেই মনে করতো আমি প্রেম বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞ এবং সারাদিন এই বিষয়েরই চিন্তা করে বেড়াই। টিউটোরায়ালবিডি সাইটটা পরিচালনা করতে এবং কিছু সাইটের হোষ্টিং পরিচালনা করতে গিয়ে আমাকে অনেক বেশ পড়ালেখা করতে হয়, শিখতে হয়, সেই বিষয়টি শেয়ার করতে হয়। আমার পাঠকরা আমাকে শিক্ষক ভাবে। কিছু লোককে খুব সহজেই পরিচয় হয়ে আন্তরিকভাব প্রকাশ করতে দেখি। বিশেষ করে মার্কেটিং এর লোকদের মধ্যে এই বিষয়টি প্রকটভাবে দেখা যায়। সহজেই একজনের সাথে পরিচয় হয়ে নিজের তত্বটি উপস্থাপন করাটা সবাই সহজে পারে না। কথাটা বললাম এই জন্য যে একজন লোক সম্পর্কে ধারনা প্রকাশের ক্ষেত্রে কথা বলাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

হাজার হাজর বছর আগে থেকেই স্লোক, গীত কির্তন, ধর্মীয় বিভিন্ন বাক্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর সেই সময় থেকে হৃদয়গ্রাহী সুমিষ্ট শব্দ, সুর ও গভীর ভাব সমৃদ্ধ কথাগুলো সাধারন কথা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। বিশেষ ব্যক্তিদের কথাগুলো প্রচারিত হয়েছে মুখে মুখে,লিখিত আকারে প্রকাশিত হয়েছে বইয়ের পাতায়।

রেডিও’র নাটক সুনেছেন কখনো? না সুনলে রেডিও বাংলাদেশের কিছু নাটক শুনতে অনুরোধ করবো। সেখানে নাটকে অংশগ্রহণকারীদের কথা দিয়ে সবকিছু প্রকাশ করতে হয়। তাই কে কি করছে বা করছে না তাও তাদের কথা দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। বেশ কিছু বাদ্য যন্ত্রেরও প্রয়োগ হয়। দুঃখে সময় দুঃখের বাজনা, বিয়ের সময় সানাইয়ের সুর ইত্যাদির মাধ্যমে হৃদয়গ্রাহী করা হয়। মূলতঃ বাস্তবতাকে প্রকাশ করার জন্য প্রচেষ্টা।

ভিডিওঃ নাটক, ছায়াছবি ইত্যাদিভিডিওঃ নাটক, ছায়াছবি ইত্যাদি

ছয়াছবি বা নাটকে অনেক বাস্তবতাকে অনেক সহজে ফুটিয়ে তোলা যায়। কল্পনার দৃশ্যে ভিডিওটি এমনভাবে করা হয় যে সুন্দরভাবে বুঝা যায় যে কল্পনার দৃশ্য। বাস্তবে আমরা যখন আগের কোন কথা ভাবতে থাকি আমাদের সেই আগের স্মৃতি আমাদেরকে সেই আগের দৃশ্য সেই আগের অনুভূতি মস্তিষ্কে আলোরিত হয়।

ওয়েবের লেখা ও ব্লগঃ

ওয়েবে যারা ব্লগিং করেন বা সাইটের জন্য কনটেন্ট লিখেন তারা কিন্তু সেই একই ভাবে নিজের বেপারটা অন্যকে জানাতে বা বুঝাতে কাজ করে যান। মনের ভাবকে শুধু লেখা দিয়ে সহজে উপস্থাপনের জন্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কাজ করা খুব সহজ না।

যে কাজটি ভিডিওর মাধ্যমে দেখানো যায়, যে কাজটি কথা বলে বুঝানো যায় সেটি ব্লগ লিখে বুঝাতে গেলে সহজ নাও হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- ব্লগে পাঠকের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকতে হয়। বসে বসে পড়তে হয়। এর চেয়ে বাস্তবের বিষয়টি বা  ভিডিও দেখা বা অডিও শোনা অনেক বেশি সহজ কাজ। এটা অবশ্য মানতে হবে যে অনেক ক্ষেত্রে লেখাটাও বাস্তবের চেয়ে আরও সহজ হতে পারে। কথাটা সেটা না কথাটা হচ্ছে- ব্লগারকে এমনভাবে লিখতে হবে যেন বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়। বিশেষ করে প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাগুলো হতে হবে এরকম।

প্রফেশনাল ও ভাল মানের ব্লগারদের মাঝে আমি কয়েকটি বিষয় দেখেছি।

  • (১) যোগ্যতা
  • (২) সৃজনশীলতা
  • (৩) ভাষার ব্যবহারশব্দ- কথা, ভাব ও ভাষাঃ ব্লগিং এর সাথে যোগ সূত্র

যোগ্যতাঃ

অনেক আগেই আমি যোগ্যতার বেপারটিকে গুরুত্ব আরোপ করেছিলাম। অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এ ভাল কিছু করতে চায়-কিন্তু কি কাজ জানে তা জিজ্ঞাস করলে বুঝা যায় তার অবস্থা মোটেও ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে নি। প্রথমে তাকে জানতে হবে- সে কি শিখবে এবং কি শিখার জন্য সে উপযুক্ত। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে শিখার জন্য তৈরী হতে হবে। সাথে সাথে কাজের জন্য কি কি প্রয়োজন সেগুলোও দেখা যেতে পারে। অনেক সময় কাজ ও শিখা একসাথে করা যায় তবে সেটা শুরু করা জন্যও তো কিছু শিখে নিতে হয়। যা হোক কথাটা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হচ্ছিল। যেটা বলতে চাইছিলাম তা হচ্ছে যোগ্যতা। যে বিষয়ে যাদের ভাল যোগ্যতা আছে তারা সেই বিষয়ে এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

সৃজনশীলতাঃ

বাজারের চাহিদার দিকে নজর রেখে কাজ করার চেয়ে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করার মাধ্যমে অনেক বড় হওয়া যেতে পারে। সৃজনশীল ব্যক্তিরা এই কাজটিই করে। অবশ্য একই বিষয়ে ভিন্নতা এনেও সৃজনশীল কাজ করা যেতে পারে।  এখন ফেসবুক বা টুইটারের মতো সাইট বানালে জনপ্রিয় করা সম্ভব হবে না। যা প্রয়োজনীয় অথচ কেউ ভাবে নি এমন কিছু করলে জনপ্রিয় হতে পারে। ( বাংলাদেশে সামহোয়ারইন সামাজিক  ব্লগটি প্রকাশ হওয়ার পরই অনেকে সামাজিক ব্লগ খুলেছে, টেকটিউনসের পর টেকি ব্লগের ভিড় জমে গেছে। কিন্তু এদের জনপ্রিয়তাই সবার উপরে এবং (এর চেয়ে ভিন্ন ও উন্নত কিছু না করতে পারলে) এদের অবস্থান অটুট থাকবে বলে মনে করি।

ভাষার ব্যবহারঃ

অনেক সহজ একটি বিষয়কে ভাষা ও ভাবের গভীরতা দিয়ে অনেক দুর এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কোন এক লেখক বলেছিলেন, “লক্ষ্য অর্জনের মধ্যে সুখ নাই, লক্ষ্যে অর্জনের পথে চলাটাতেই সুখ।” লিউ বাবাতুয়ার Why I don’t care about success লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। অনেকের ভাষার ব্যবহারটা এমন হয় যে, মূল বিষয়টার চেয়ে ভাষাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শব্দ, ভাষা ও ভাবের গভীরতা দিয়ে লেখার চেষ্টা করা উচিৎ। লেখাটি খুব দ্রুত শেষ করার চেষ্টা না করে একই বিষয়ের গভীরে প্রবেশের জন্য চিন্তা ভাবনা করে  লিখলে লেখাটি আরও হৃদয়গ্রাহী হতে পারে। ব্লগে আমরা তো আর সুর ঢুকিয়ে, অভিনয় করে দেখিয়ে নিজের মনটাকে বাইরে এনে প্রকাশ করতে পারি না। যতটা সম্ভব প্রকাশ করার চেষ্টা করতে হবে।

2 thoughts on “শব্দ- কথা, ভাব ও ভাষাঃ ব্লগিং এর সাথে যোগ সূত্র”

  1. হ্যা আসলেই যারা ব্লগার তাদেরকে শিক্ষক ভাবাই যেতে পারে। কারণ যখন কোন ব্লগ কোন বিশেষ বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তখন সে ব্লগে এমন পাঠকই যাবে যার সে সম্বন্ধে ধারণা নেয়ার প্রয়োজন বা জানতে আগ্রহী, আর সেকল ব্লগ এমন মানুষই পরিচালনা করবে যারা সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান বা মোটামুটি ভালই জ্ঞান রাখে।

    সেক্ষেত্রে পাঠক হল ছাত্র এবং ব্লগার হলেন শিক্ষক, আর এটাই স্বাভাবিক।

    সবমিলিয়ে তথ্যবহুল পোস্ট। আমার ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।

    1. @ডিজে আরিফ,অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক ভাবা যায় তবে পরিবেশটা কিন্তু অনেক আন্তরিক হয়। অনেক সময় এমন হয় যে ব্লগার তার পাঠক ও মন্তব্যকারীর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। ক্লাসের প্রশ্নউত্তর পর্বের মতোই কাজ করে মন্তব্য অংশটা। ব্লগারের সাথে তার পাঠকের যোগাযোগ যত ভাল হবে তত বেশি আলোচনা হবে। তাই ব্লগের ভিজিটর, পেজভিউ এর যেমন গুরুত্ব আছে ঠিক তেমনি আন্তরিকাতরও গুরুত্ব অনেক।

Leave a Comment