ওয়েবসাইট ডাউন হলে কি করবেন?

কোন ক্লাইন্টের ওয়েবসাইট ডাউন হলে সাথে সাথে ফোন চলে আসে। আমার সাইট ডাউন হয়ে গেছে, সাইট খুলছে না, ডাটাবেজ ইরর দেখাচ্ছে। সারভার ডাউন হওয়ার সাথে সাথে এরকম একটার পর আরেকটা ফোন আসাটা অস্বাভাবিক কোন বেপার না। অনেকগুলো ক্লাইন্ট থাকলে এই সমস্যা প্রকটভাবে দেখা যায়। প্রথমতঃ তাদের ফোন সমুহ রিসিভ করে বুঝিয়ে বলতে হয় যে, দেখছি কি সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ নিজ হাতে সমস্যাটা খতিয়ে দেখতে হয়। সেই সময়টা যেহেতু খুবই মূল্যবান তাই কাজটা করা বেশি জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদেরকে বুঝিয়ে বলাটাও জরূরী যে বেপারটা আমি জানি বিষয়টা আমি দেখছি।

সেই ব্যস্ততম সময়ে অনেক বেশি ফোন আসলে ফোনটা অন্য কাউকে দিয়ে বলানো যেতে পারে যে, সাইটের সমস্যাটা দেখা হচ্ছে, কাজ চলছে। ঠিক হলে আপনাদেরকে জানানো হবে। দিখতে হবে কি সমস্যা হচ্ছে।

ওয়েবসাইট ডাউন হলে কি করবেন?

সমস্যা নিরূপণঃ

প্রথমতঃ বুঝতে হবে সমস্যাটা হয়েছে কিনা। সমস্যা হলে কি সমস্যা? সাধারনতঃ কয়েকটি কারনে এই সমস্যা দেখা যায়।

  • ১. ওয়েবসাইটের প্রোগ্রামে সমস্যা
  • ২. ডিএনএস সমস্যা বা ডোমেইনের সময়সীমা শেষ
  • ৩. নেটওয়ার্কের সমস্যা
  • ৪. সারভারে কোন ধরনের সফটওয়্যারজনিত সমস্যা
  • ৫. অতিরিক্ত ভিজিটর বা DDoS আক্রমন
  • ৬. সারভার একেবারেই ক্র্যাশ

অধিকাংশ সময় সারভার ডাউন না হলেও আপনার কাছে ফোন আসতে পারে। অদক্ষ ক্লাইন্ট কোন রকমের পরীক্ষা না চালিয়েই আপনাকে বলতে পারে যে সারভার ডাউন, কিছু একটা করেন। বেশ কিছু কারনে সারভার ডাউন না হওয়া সত্ত্বেও মনে হতে পারে যে,সাইট ডাউন হয়ে গেছে।

ক. ক্লাইন্টের ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যাঃ

ক্লাইন্টের ইন্টারনেটের সংযোগে সমস্যাজনিত কারনে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাটা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো না। এক এক জন এক এক ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে। অনেক সময় ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়ার কারনে কোন কোন দিকের লাইন বিচ্ছিন্ন থাকে, কিছু প্রক্সির মাধ্যমে আইএসপি কোম্পানীগুলো জনপ্রিয় সাইটগুলোকে সাপোর্ট দিলেও আপনার ক্লাইন্টের সাইটের লাইনটি সেই দিকের না। আর তাই সেই ওয়েবে ঢোকা যাচ্ছে না। ক্লাইন্ট মনে করলো যে সারভার ডাউন। এমনও হতে পারে কোন একটি দেশেই সাইটটি দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই একই কারনে অন্য দেশে সাইটটি সচল আছে। এ ক্ষেত্রে দূরের কোন বন্ধুকে সাইটটি টেষ্ট করে দেখতে বলতে পারেন।এমনও হতে পারে যে, জনপ্রিয় সাইটগুলো ক্লাউড হোষ্টিং ব্যবহার করে আর তাই তারা কাছের সারভার থেকে সার্ভিস দিতে পারছে, কিন্তু আপনার হোষ্টিং সেই সার্ভিস দিতে পারছে না। স্বভাবতই মনে হচ্ছে সারভার ক্র্যাশ

খ. অপারেটিং সিস্টেম বা ব্রাউজার জনিত কারনঃ

এমনও হতে পারে ফায়ারওয়াল বা ব্রাউজারের সিকিউরিটির জন্য সাইটটি ভিজিট করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্রাউজারের ক্যাশ মুছে ফেলা ও ফায়ারওয়াল বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলতে পারেন।

পিং করাঃ

নিজের পিসি থেকে প্রথমে পিং করে দেখতে পারেন যে সাইটটি সচল আছে কিনা।

Start-Program–Accessories–Command Prompt নিচের মতো করে কমান্ড লিখে পিং করে দেখুন সাইটটি পাওয়া যাচ্ছে কিনা।

ওয়েবসাইট ডাউন হলে কি করবেন?

ping tutorialbd.com

ফলাফল আসবে

Reply from 92.52.106.33:

bytes=32 time=12ms TTL=53

তার মানে সারভার ও সাইটটি সচল আছে। ব্রাউজারের বা অন্য কোন কারনে সাইটটি দেখা যাচ্ছে না। সাইটটি রেসপন্স না করলে Timed out লেখা আসবে। লিনাক্সে নিচের মতো উইনডো আসবে।

ডোমেইন চেক করাঃ

প্রতিটি ডোমেইনের মেয়াদের তারিখ লিখে রাখা জরুরী। যারা অনেকগুলো ডোমেইন পরিচালনা করেন তারা প্রতি মাসের প্রথমে দেখে নিতে পারেন কোন ডেমেইনটি কোন মাসে এক্সপেয়ার হবে। ডোমেইন প্রোভাইডার সাইট থেকে অথবা who.is থেকে ডোমেইনটি এক্সপেয়ার হয়েছে কিনা, কবে কেনা হয়েছে, কবে মেয়াদ শেষ হবে তা জেনে নিন।

সফটওয়্যার পরীক্ষা করাঃ

যদি শুধু সাইটটিতে সমস্যা হয় এবং সারভার ঠিক থাকে তাহলে সাইটের কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশ করতে পারবেন। সেখানে অনেকগুলো সফটওয়্যার সেটআপ করা থাকে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। সাইটের ফাইলগুলো ঠিকমতো আছে কিনা দেখে নিন। এ বেপারে নিজে পারদর্শি না হলে হাত না দেওয়াই ভাল।

যোগাযোগঃ

আইএসপির সাথে সরাসরি যোগাযোগ। ওয়েবসারভার কেনার আগে অবশ্যই সাপোর্টের অবস্থা জেনে নিতে ভুলবেন না। ভাল সারভারে ২৪ ঘন্টা সাপোর্টের ব্যবস্থা থাকে। সারবার নেওয়ার পরে তাদের ফোন নম্বর জেনে নিবেন। অনেক ওয়েব সারভার তাদের সাপোর্টের বেশ কিছু কাজ ফেসবুক ফ্যান পাতার মাধ্যমে করে থাকে, তাই ফ্যান হয়ে নিন। টুইটারেরও তাদের অনুসরণ করুন। যোগাযোগের অনেকগুলো মাধ্যম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যেমন- ফোন, ই-মেইল, মেসেঞ্জার, সামাজিক নেটওয়ার্ক ইত্যাদি

এ বেপারে আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি,

বেশ কিছু দিন আগে মিডিয়াটেম্পলে আমার হোষ্ট করা সারভার বাংলাদেশ থেকে দেখা যাচ্ছে না। এমন কি তাদের নিজস্ব সাইটেও ঢোকা যাচ্ছিল না। আমি নিশ্চত হয়ে গেলাম যেহেতু তাদের অফিসিয়াল সাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না তাহলে খুব সহজেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আধা ঘন্টার মতো সাইট বন্ধ। ঠিক হচ্ছে না। এদিক দিয়ে কয়েকজনের ফোন চলে আসলো। এবার তাদেরকে খুজে পেলাম ফেসবুক পাতায়। সেখানে সেখানে সাপোর্টের খুব সুন্দর ব্যবস্থাপনা আছে। সেখানে গিয়ে পোষ্ট দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিটব্যাক পেলাম যে, সাইটটি বাংলাদেশ ও কয়েকটি দক্ষিনাঞ্চলের লাইন থেকে দেখা যাচ্ছে না, অন্য সব জায়গা থেকে দেখা যাচ্ছে। কারন এই অঞ্চলের কোন এক তার কাটা পড়েছে, যে ভিন্ন লাইনে ইন্টারনেট সচল আছে তার সাথে কিছুক্ষনের মধ্যেই যুক্ত করা হচ্ছে। ফেসবুকে এক ইউরুপের এক বন্ধুকে জিজ্ঞাস করে জানতে পারলাম সাইটটি ঠিক আছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সাইট বাংলাদেশে ঠিক হয়ে যায়।

তাই ভিন্ন পথে যোগাযোগের মাধ্যম অবশ্যই জেনে রাখা দরকার। এমনও হতে পারে, ফোন করার সাথে সাথে কেউ রিসিভ করছে না, এমনও হতে পারে সেই দেশে ফোন করলে অনেক টাকা কাটে যা করা আপনার পক্ষে সম্ভব না। তাই অবশ্যই কয়েকটি পথ রেখে দিতে হবে।

ব্যাকআপঃ

সাপোর্ট খারাপ হলে সারভার পরিবর্তন করবেন। অনেক বেশি পরিবর্তিত হয় এরকম সাইটগুলোর (বিশেষ করে ব্লগ ও ফোরাম) ব্যক্প নিয়ে নিন। অন্ততঃ প্রতি মাসে একবার করে ব্যাকআপ নিতে পারেন। ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন করার পর সাইটের ব্যাকআপ নিয়ে নিবেন। ব্যকআপ ফাইলগুলো অনেক বড় হয়ে গেলে ছবি, ডাটাবেজ ও অন্যান্য ফাইলগুলো আলাদাবাবে ব্যাকআপ নিতে পারেন। ডিজাইনের পরিবর্তন না হলে ডাটাবেজের ব্যাকআপ নিতে পারেন।

সারভার পরিবর্তনঃ

আপনার সাইট যদি ঘন ঘন ডাউন হয়ে যায়, জানানোর পরেও ভাল সার্ভিস না পান তাহলে আপনি অবশ্যই সারভার পরিবর্তন করে নিবেন। অনেক সময় আপগ্রেডও করতে হতে পারে। আনলিমিটেড হোষ্টিং ব্যবহারকারীকে অনেক সময় ভিপিএসে আপগ্রেড হতে দেখা যায়। ডাটাবেজ ব্যকআপ ও সারভার পরিবর্তনের উপরে রাসেল একটি টিউটোরিয়াল লিখেছে। সেটা দিখে নিতে পারেন।

ভিপিএস ও ডেডিকেটেড সারভার পরিচালনা করার জন্য বেশ কিছু প্রশিক্ষন দরকার আছে। এগুলো জেনে নিতে পারেন। ডেডিকেটেড সারভার পরিচালনায় দক্ষ হয়ে গেলে পরিচালনার উপরে টিউটোরিয়াল লেখার আশা রইলো। আপনাদের জনা অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

কৃতজ্ঞতাঃ

স্ম্যাশিং ম্যাগাজিন

sthompsondesign

8 thoughts on “ওয়েবসাইট ডাউন হলে কি করবেন?”

  1. ধন্যবাদ তথ্য গুলোর জন্য । কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ ওয়েব সাইট গুলো ddos আক্রমন এর শিকার হয় ।
    কারন এক সময় তারাই ddos আক্রমন করত যাদের নেট স্পিড অনেক বেশি কিন্তু এই পদ্ধতিতে সবাই python script দিয়ে আক্রমন করত তবে এই পদ্ধতিতে তাদেরকে অনলাইনে থাকতে হত ,আবার এখন অট সার্ভার run এর মাধ্যমে ddos attack হচ্ছে যার ফলে যাদের ওয়েব সাইট সীমিত BANDWIDTH তারা এর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ।তাই আপনি যদি ddos attack থেকে রক্ষাপাওয়ার জন্য কোন টিঊটরিয়াল লিখতেন তাহলে অনেকে জন্য ভাল হত।
    আবার ধন্যবাদ সুন্দর একটি টিঊটরিয়াল জ়ন্য ।:D

    1. @rupam,ধন্যবাদ রূপমভাই। “বাংলাদেশের অধিকাংশ ওয়েব সাইট গুলো ddos আক্রমন এর শিকার হয়”-এটা জানতাম না। কারো সাথে ঝামেলা না থাকলে এরকম কেউ করে না বলেই জানা। কারন এটা করতেও আক্রমনকারীকে সময় দিতে হয়। এই আক্রমন থেকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা পাওয়া কঠিন। আই পি ব্লক সহ বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। অনেকে মিরর সাইট বানিয়ে আক্রমন কালীন সাইট সাময়িক বন্ধ রাখে। আমি আরো কিছু জেনে তার পর লিখতে পারি।

      1. @ডিজে আরিফ, শুধু মাত্র বইয়ের নাম ও ডাউনলোড লিঙ্ক দিয়ে পোষ্ট করলে হবে না, মান সম্পন্ন রিভিউ লিখলে অবশ্যই প্রকাশিত হবে। আর যেহেতু শিবলীসহ আরো অনেকের বইগুলো প্রয়োজন, তাই শেয়ার করলে উপকৃত হবো। আপনার নিয়মিত উপস্থিতি ও লেখাগুলো বেশ ভাল লাগছে।

        1. @মাহবুব টিউটো,
          অবশ্যই মাহবুব ভাই, শুধু লিঙ্ক প্রকাশ করবো না, সাথে বিস্তারিত রিভিউ থাকবে, আসলে অন্যান্য বাংলা ব্লগগুলোতে তেমন ভালো ফিল করি না, যতটানা আপনার, জিন্নাত ভাইয়ের আর রিয়া আপুর ব্লগে ফিল করি।
          আশা করি সাথে থাকবো।

  2. এই ব্লগ এ আমি নতুন আসলাম। কিন্তু আমি দুখঃ পেলাম…কারন আগে কেন এটার সন্ধান পাই নি? আমি প্রায় সব আর্টিকেল পরলাম। অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ এই ব্লগ এর সবাইকে…

  3. ওবাইদুল

    দয়া করে আমাকে এই …( FaceSDK )সফটওয়্যারের সিরিয়াল নাম্বার দিবেন কি

Leave a Comment