প্রোগ্রামিং ভাষা কি ?

আজ এখানে মূলতঃ প্রোগ্রামিং ও প্রোগ্রামিং ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা আলোচনা করবো। এই লেখাটি আগে টেকটিউনসে প্রকাশ করেছি।

প্রোগ্রাম, প্রোগ্রামিং কি?

কমপিউটারের মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নিদের্শমালার সমষ্টিকে প্রোগ্রাম (program) বলা হয়। আর এই ধারা বণর্না বা প্রোগ্রাম রচনার পদ্ধতি বা কৌশলকে প্রোগ্রাম পদ্ধতি বা প্রোগ্রামিং (programming) বলা হয়। অন্য কথায়, কোন সমস্যা অল্প সময়ে এবং সহজে সমাধানের উদ্দেশ্যে সম্পাদানের অনুক্রমে নিদের্শাবলী সাজানোর কৌশলকে প্রোগ্রামিং বলা হয়।
প্রোগ্রামিং ভাষা কি ?

প্রোগ্রামিং ভাষা কি ?

কমপিউটারের মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধান তথা প্রোগ্রাম রচনার জন্য ব্যবহৃত শব্দ, বর্ণ, অংক, চিহৃ প্রভৃতির সমম্বনেয় গঠিত রীতিনীতিকে প্রোগ্রাম ভাষা (Programming Language) বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম রচনার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ভাষা ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ অনেক ধরনের ভাষা ব্যবহার করে। কিন্তু কমপিউটার এই সব ভাষা বোঝে না। তাই কমটিপউটারকে তার নিজস্ব বোধগম্য ভাষায় নিদের্শ প্রদানের লক্ষ্যে নিদির্ষ্ট নিয়ম অনুযায়ী শব্দ, বর্ন , সংকেত এবং এগুলোর বিন্যাসের নিদির্ষ্ট নিয়ম মিলিয়ে একসঙ্গে বলা হয় প্রোগ্রাম ভাষা।

জনপ্রিয় কয়েকটি প্রোগ্রাম ভাষা

উচ্চতর ভাষায় প্রোগ্রাম লেখার জন্য ইংরেজী শব্দ ও ইংরেজী বাক্য ব্যবহৃত হয়।

নিচে কয়েকটি প্রোগ্রাম ভাষার নাম দেওয়া হল

বেসিকঃ

বেসিক কমপিউটার প্রোগ্রামের একটি জনপ্রিয় ভাষা। বেসিক (BASIC) শব্দটি Beginner’s All Purpose Symbolic Instruction Codes – এর সংক্ষিপ্ত রুপ। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের দুইজন অধ্যাপক জন জি কেমিনি এবং টমাস কাটর্জ, ছাত্র-ছাত্রীদের সহজে প্রোগ্রাম শিখানোর উদ্দেশ্যে এ ভাষা উদ্ভাবন করেন। ১৯৭৮ সালে আমেরিকান ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বেসিকের একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রতিরুপ নির্ধারন করে। যার ফলে এ ভাষার দ্রুততর প্রসার ঘটে।

কিউবেসিকঃ

কিউবেসিক বেসিকের একটি উপভাষা। এটি উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোসফট কোম্পানি। QBASIC শব্দটি এসেছে QUICK BASIC থেকে। এ ভাষার প্রোগ্রামে লাইন নম্বর দিতে হয় না। কিউবেসিকে মেনু ব্যবহার করে কাজ করা যায়। মেনুতে প্রোগ্রাম সম্পাদন, ভুল নির্ণয় ও শুদ্ধিকরণ, একসাথে একাধিক ফাইল ও উইন্ডো ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও কিউবেসিকের অনেক সুবিধা আছে।

ভিজুয়াল বেসিকঃ

ভিজুয়াল বেসিক একটি প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ। বর্তমান কিউবেসিকের পরিবর্তে ভিজুয়াল বেসিকের ব্যবহার সাবর্জনীন। দ্রুত এবং সহজ প্রোগ্রাম উন্নয়নের সুবিধা থাকায় দক্ষ ও অদক্ষ সব শ্রেনীর প্রোগ্রামারদের কাছে এই ভাষা বেশ জনপ্রিয়।

এ্যলগলঃ

এ্যালগল (ALGOL)- এলগরিদমিক ল্যাংগুয়েজ (Algorithmic Language) সংক্ষিপ্ত রুপ। ১৯৫৮ সালে সব কমপিউটারে ব্যবহারযোগ্য সাবর্জনীন ভাষা উদ্ভাবনের চেষ্টার ফলে ইউরোপে এ ভাষার উদ্ভব হয়। ইউরোপের বাইরে এর বিস্তার তেমন নেই।

ফরট্রানঃ

ইংরেজী FROTRAN শব্দটির পূর্ণরুপ Formula Translation। গাণিতিক উপায়ে বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলিক সমস্যা সমাধানের জন্য এ ভাষা অত্যন্ত উপযোগী। ১৯৫৭ সালে আইবিএম কোম্পানী এ ভাষা চালু করে। অনেকগুলো ভার্সনের মাধ্যমে বিবর্তিত হযে ফরট্রান একটি শক্তিশালী উচ্চতর ভাষা হিসাবে বিকশিত হয়েছে।

কোবলঃ

ইংরেজী COBOL শব্দটির পূর্ণরুপ Common Business Oriented Language। হিসাব ও হিসাবের খতিয়ান, বেতনের খতিয়ান, বেতনের হিসাব এবং এ ধরনের পদ্ধতিগত হিসা সংরক্ষণের জন্য কোবল চালু হয়েছে। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ বাণিজ্যিক প্রয়োগের উপযোগী সাবর্জনীন ভাষা উদ্ভাবনের জন্যে কমপিউটার প্রস্তুতকারী, ব্যবহারকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বেয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটির উদ্ভাবিত ভাষা কোবল স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে।

প্যাস্কেলঃ

প্যাস্কেল সাধারনের ব্যবহার উপযোগী উচ্চতর ভাষা। এলগল-৬০ ভাষা অবলম্বনে এ ভাষা উদ্ভাবন করা হয়। গত শতাব্দির সত্তর দশকের দিকে সু্ইজারল্যান্ডের জুরিখের টেকনিক্যাল ইউনিভারসির্টিতে নিকলাস হু্ইরথ এ ভাষা উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে প্যাস্কেল অত্যন্ত জনপ্রিয় উচ্চতর ভাষা হিসেবে পরিচিত।

সিঃ

ডেনিস রিচি ১৯৭০ সালে বেল ল্যাবরেটরিতে সি ভাষার উদ্ভাবন করেন। প্রথমে পিডিপি-১১ এ ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রনে এ ভাষার প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় উচ্চতর ভাষা হিসেবে সি পরিচিত। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কমপিউটারে এবং বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রনে সি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

সি প্লাসপ্লাসঃ

সি++ একটি বহুল ব্যবহৃত অবজেক্ট অরিযেন্টেড প্রোগ্রাম ভাষা। ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এটি এন্ড টি বেল ল্যাবরেটরিতে জর্ন স্ট্রাউসট্রপ এ ভাষা উদ্ভাবন করেন। প্রথমে এর নাম ছিল সি উইথ ক্লাস। পরবর্তীতে আরও নতুন নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা যোগ করে ১৯৮৩ সালে নাম করন করা হয় সি ++। সি++ এ সি এর সকল বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা সহ অতিরিক্ত আরও কিছূ সুবিধা আছে। এজন্য সি++ কে সি এর বর্ধিত সংস্করন বা সুপারসেট বলা হয়।

জাভাঃ

জাভা একটি শক্তিশালী আধুনিক প্রোগ্রাম ভাষা। ১৯৯১ সালের শেষের দিকে জেমস গসলিং এর নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ কর্তৃক জাভা ভাষার সূচনা করে। প্রথমে এর নাম ছিল ওক । পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে এর নাম করন করা হয় জাভা। জাভা অনেকটা সি++ এর মত, তবে সি++ এর তুলনায় এ ভাষা সহজ, নিরাপদ প্লাটফর্ম অনির্ভরশীল। ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহারিক সফটওয়ার উন্নয়নে এ ভাষার ব্যবহার অতুলনীয়।

দাম কমে আসার ফলে কমপিউটারের প্রয়োগ ও ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। প্রোগ্রাম রচনার জন্য সাধারনত উচ্চতর ভাষা জনপ্রিয়। কমপিউটার সরঞ্জামের দাম কমলেও প্রোগ্রাম রচনা ও প্রোগ্রাম পরিচালনার ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে কমপিউটারের ব্যবহার এবং এর প্রোগ্রাম ভাষার শেখার কোন বিকল্প নেই।

4 thoughts on “প্রোগ্রামিং ভাষা কি ?”

  1. জাভাটাই একটু জানি! তবে, ওয়েব প্রোগ্রামিং কিন্তু ডেক্সটপ প্রোগ্রামিং এর চেয়ে আমার কাছে সহজ লাগে।

    1. @শিবলী, কিছু কিছু ল্যাংগুয়েজে অবশ্য ডেক্সটপ ও ওয়েব প্রোগামিং এর মাঝে পার্থক্য টানা যায় না। ডটনেট প্লাটফর্মে অনেক কিছুই একরবম, জাভাতেও একই জিনিস। ইদানিং সব ডেস্কটপ সফটওয়্যার কোম্পানিই তাদের অনলাইন ভার্শনও বানাচ্ছে (যেমন -অফিস,এডোবি ফটোশপ) । মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে পারলে কোন প্রোগ্রামিং ভাষাই সমস্যা হয়ে দাড়াবে না।

  2. হা হা বিশাল এ প্রোগ্রামিং ভুবনে ছোট্ট শিশুটি হাসে আর শিখে!!

  3. Wow, amazing blog layout! How long have you been blogging for? you made blogging look easy. The overall look of your web site is wonderful, let alone the content!. Thanks For Your article about প্রোগ্রামিং ভাষা কি ? | টিউটোরিয়ালবিডি .

Leave a Comment