ফটোগ্রাফীর ইতিহাস (পর্ব তিনঃ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ)

১৮৩০ সাল থেকে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ফটোগাফীর ইতিহাস বিগত দশ বছরে ব্যাপক ভিত্তিক রূপ লাভ করে। এখন ফটোগ্রাফী বলতে কোটি লোকের চাহিদা আর প্রিয় সখ হিসেবে আক্ষায়ীত। শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয় ফটোগ্রাফী পন্য বিক্রয়ের মাধ্যমে। সামাজিক নিরাপত্তা থেকে দৈনন্দিন আচার অনুষ্ঠান সহ সব জায়গায়ই ছবি প্রয়োজন। হয়তো বা ফটোগ্রাফারদের অনেকেই জানে না তার ক্যামেরার সাটার স্পিডের কথা, জানে না ফটোগাফীর ইতিহাস আর জানে না Henri Cartier-Bresson বা even Annie Leibovitz এর মতো নিবেদিত প্রানের কথা যাদের মাধ্যমে আজ এ ফটো রাজ্য।

ফটোগ্রাফীর আগের দুইটি পর্বে ইতিহাসের বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।  প্রথম পর্বে (১৮২৫-১৯০৭) ক্যামেরা অবস্কুরার আবিষ্কার থেকে ম্যাক্সওয়েলের প্রথম রঙিন ছবি তোলার কথা বলা আছে। দ্বিতীয় পর্বে (১৯৩৫-১৯৮০) কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্যামেরা বাজার জাত করে ও ব্যাবসায়ীক ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। আজকের আলোচনায় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রবেশের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা আলোচনা করা হবে।

১৯৬৯ সালের ১৭ অক্টোবর বেল ল্যাবে George Smith ও Willard Boyle চার্জ কাপল ডিভাইজ (সিসিডি) ( চার্জ কাপল ডিভাইজে ইলেক্ট্রনগুলো বিভিন্নপথে চলাফেরা করতে পারে এবং চার্জ প্রদানের মাধ্যমে তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়) ১৯৭০ সালে চার্জ কাপল ডিভাইজ ভিডিও ক্যামেরাতে ব্যাবহৃত হয়। ১৯৭৫ সালে বেশ ভাল মানের ভিডিও ব্রডকাষ্ট করা সম্ভব হয়।

১৯৮১ সালে সনি সর্বপ্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা (ম্যাভিকা) বাজারজাত শুরু করে। এটি ২৫ টি পর্যন্ত ছবি ধারন করে ফ্লপি ডিস্কে সংরক্ষন করতে পারতো। এটি মূলত ভিডিও ক্যামেরা ছিল।

ফটোগ্রাফীর ইতিহাস (পর্ব তিনঃ ডিজিটাল যুগ প্রবেশ)

কোডাকের বিজ্ঞানীরা ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম মেগাপিক্সেল সেনসর আবিষ্কার করেন। ১৯৮৭ সালে তারা সাতটি ডিভাইজ(ছবি রেকর্ড, সংরক্ষন, সম্পাদন, ট্রান্সফার ও প্রিন্ট করার জন্য) বাজারজাত শুরু করে।

১৯৮৮ সালে প্রথম জেনারেশন ক্যামেরা তৈলী করে ফুজিফিল্ম। এটিতে CMOS সেনসর ব্যাবহৃত হয় এবং কম্পিউটারের সাথে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। ১৯৯১ সালে ফটোসাংবাদিকতা ব্যাপকভাবে শুরু হয়, ব্যাক্তিগত পর্যায়ে ডিজিটাল ক্যামেরা কেনা শুরু হয়। সিসিডি আবিষ্কারের ৪০ বছর হয়েছে মাত্র তাতেই লক্ষ লক্ষ ক্যামেরায় বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।

ডিজিটাল ক্যামেরা কিভাবে কাজ করেঃ

ফ্লিম ক্যামেরা মূলতঃ আগত আলোকে ফটো ফিল্মে সংরক্ষন করে,আর ডিজিটাল ক্যামেরা আগত আলোকে বিভিন্ন পিক্সেলে ভাগ করে প্রতিটি পিক্সেল হিসেব করে সংরক্ষন করে। বিভিন্ন রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন, আর ভিন্ন ভিন্ন ডাটা সেমিকন্ডাক্টার চিপে সংরক্ষিত হয়। উন্নত ধরনের ক্যামেরায় এক এক রঙের (মৌলিক রং লাল,সবুজ ও নীল) জন্য এক একটি সেনসর থাকে একটি ছবি তুলতে গেলে তিনটি ছবি তোলা হয় ও তা একত্রিত করে মূল ছবিটি দেখা যায়।

ফটোগ্রাফীর ইতিহাস (পর্ব তিনঃ ডিজিটাল যুগ প্রবেশ)

ডিজিটাল ক্যামেরায় ফিল্টারের ব্যাবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চোখ সুনিদিষ্ট সংখ্যক রং না দেখলেও ক্যামেরায় নির্দিষ্ট সংক্ষক রঙের আলাদা আলাদা ভাগ করা হয়। অটো ফোকাসের মাধ্যমে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশেও সুন্দর ছবি তোলার সুবিধা দেয়।

 

নতুন ক্যামেরা টেকনোলজী ফটোগ্রাফীতে কি রকম প্রভাব ফেলে?

ডিজিটাল ক্যামেরা আসার সাথে সাথে ফটোগ্রাফারদের মাঝে দুইভাবে প্রভাব ফেলে। তারা ডিজিটাল জুম, ইফেক্ট ও ফ্লাসের কাজগুলো শিখতে থাকে ও তার বাস্তব প্রয়োগে কাজ করে। ক্যামেরার উন্নয়েনর সাথে সাথে এর বিভিন্ন প্রোগ্রামে ফটোগ্রাফারের প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো যুক্ত হওয়ায় বেশ একটা স্বাচ্ছন্দ অনুভব করা যায়। বিশেষ করে ছবি তোলার সাথে সাথেই একটি প্রিভিউ দেখার ব্যাবস্থা ফটোগ্রাফারকে নিশ্চত করে। ডিজিটাল টেকনোলজীতে ছবিগুলো মেমরী চীপে সংরক্ষিত হওয়ায় একাধিক ছবি তোলার বেপারে সমস্যা হয় না- কারন একাধিক ছবিতে ফ্লিল্মের খরচের বেপারটি এখানে নেই।

এছাড়াও ছবিতে সৃজনশীলতা ছোয়া লাগতে থাকে। বিভিন্ন ধারনের ফটোগ্রাফী যেমন-স্পিড ফটোগ্রাফী, ম্যাক্রো ফটোগাফী, এরিয়াল ফটোগ্রাফী ইত্যাদি আইডিয়ার জন্ম হয়।

ছবি সম্পাদনা প্রোগ্রাম

১৯৮৭ সালে মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএসডি ছাত্র থমাস নল গ্রে-স্কেল ছবি থেকে মনোক্রোম ছবি তৈরীর প্রোগ্রাম তৈরী করেন। ছয়মাস কাজ করে তারা দুই জন একটি ইমেজ প্রো নামের ছবি সম্পাদনার প্রোগাম তৈরী করেন। তিনি অল্প কিছুদিনের জন্য একটি স্ক্যানার প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেন এবং প্রোগামটি আরও আপগ্রেড করে ফটোশপ নাম দেন।এই সময় তিনি এপল ও এডোবি কোম্পানিতে ভ্রমনে যান ও তাদের সাথে সফলভাবে কাজ করেন। এবং ফটোশপের ভাল একটি ভার্শন তৈরী করেন। এই সময় (১৯৮৮ সালে) এডোবি কোম্পানি ফটোশপের লাইসেন্স কিনে নেন। দুই বছরের মধ্যে ম্যাকিনটোসের জন্য এডোবি ফটোশপ ১.০ বাজারে উম্মুক্ত করা হয়।

ফটোশপের ব্যাবহারে ফটোগ্রাফীতে ব্যাপক সারা পরে যায়। বর্তমানে ফটোশপ সহ অনেকগুলো প্রোগ্রামই ফটোগ্রাফারদের হাতের নাগালে।

অনলাইন কমিউনিটিঃ

২০০০ সালে Getty Images তাদের স্টক ফটোগ্রাফীর কাজ শুরু করেন।

২০০১ সালে গুগল তাদের সার্চে ছবি অনুসন্ধানের ব্যাবস্থা করে।

২০০৪ সালে অনলাইনে ফটোগ্রাফারদের কমিউনিটি তৈরীর উদ্দেশ্যে কানাডিয়ান কোম্পানি Ludicorp এর মাধ্যমে Flikr এর জন্ম হয়।

আজও পর্যন্ত হাজার হাজার ওয়েবসাইট ছবি শেয়ারের ব্যবস্থা করে। বর্তমান সময়ের ফটোগ্রাফারের প্রিয় ছয়টি ওয়েবসাইটের তালিকা দেখতে পারেন যেখানে বিশ্ব সেরা ফটোগ্রাফারদের বসবাস।

ফটোগ্রাফীর ইতিহাসের সাথে জরিয়ে আছে হাজার হাজার নিবেদিত ফটোগ্রাফারের নাম যাদের কথা উল্লেখ করা হলো না। পরিশ্রম আর সাধনায় ফটোগ্রাফারদের হাতের ছোয়ায় বর্তমান সভ্যতা ফটোগ্রাফিতে এই অবস্থানে এসেছে।

বাংলা পাঠকদের জন্য ফটোগ্রাফীর ইতিহাসটি  টুটপ্লাস থেকে অনুবাদ ও সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হলো। …

Leave a Comment