ফটোসপ বেসিক: টুলবক্স পরিচিতি

আসুন ফটোসপের টুলবক্স সম্পর্কে জেনে নেই। ফটোশপ চালু করলে এর বামদিকে দেখতে পাবেন টুলবক্স। কোন যন্ত্র খারাপ হয়ে গেলে যেমন একটি ছোট টুল বক্সের মধ্যে সেলাই রেঞ্জ, প্লাস, স্ক্রু ইত্যাদি থাকে তেমনি ফটোশপে ছবির কাজ করার সময় টুলবক্স অত্যান্ত জরুরী একটি বিষয়।

[tutoadsense]

চিত্র-১ টুল বক্স

আসুন এক এক করে সব টুল বক্সের কাজ জেনে নেই। এখানে প্রায় ৩০ রকম টুল আছে। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এদেরকে ৬ টি গ্রুপে ভাগ করছি। প্রতিটি টুলে আবার দু থেকে তিনটি করে সাব টুল আছে। টুলের উপর রাইট ক্লিক করলেই এগুলো পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই
প্রথম ভাগ-

১। Marquee Tool:

Marquee Tool চার প্রকার

ক. Rectangular Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি চার কোনা আকারে ইমেজ সিলেক্ট করতে পারেন। নরমালি ড্র্যাগ করে সিলেক্ট করা যাবে। আর যদি আপনি শিফট ধরে ড্র্যাগ করেন তাহলে বর্গাকারে সিলেক্ট হবে।

খ. Elliptical Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি বৃত্তাকারে ইমেজে সিলেক্ট করতে পারেন। নরমালি ড্র্যাগ করে সিলেক্ট করা যাবে। আর যদি আপনি শিফট ধরে ড্র্যাগ করেন তাহলে বর্গাকারে সিলেক্ট হবে।

[tutoadsense]

গ. Single Row Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি ইমেজে Row আকারে দাগ ভাবে সিলেক্ট করতে পারবেন।

ঘ. Single Column Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি ইমেজে Column আকারে দাগ ভাবে সিলেক্ট করতে পারবেন।

Marquee Tool এর যে কোন একটি সিলেক্ট করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে নিচের চিত্রের মত আসবে।

এখান থেকে আপনি অপশন পরিবর্তন করে বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। যেমন আমি যদি Feather 10 Px করে Rectangular Marquee Tool দিয়ে সিলেক্ট করে Alt+Backspace দিই তাহলে এমন হবে

২। Move Tool: এই টুলটির নাম Move Tool এটি দিয়ে আপনি আপনার ইমেজের কোন লেয়ারকে মুভ করাতে পারি। (লেয়ার সম্পর্কে একটু পরে যাচ্ছি) । আপনি এখানে ক্লিক করলেই দুই বা ততোধিক লেয়ার থাকলে এ্যাকটিভ লেয়ারটি সিলেক্ট হবে এবং আপনি ড্র্যাগ করে Move করাতে পারেন।

৩। Lasso Tool: ইমেজের বিভিন্ন স্থানে সিলেক্ট করতে এর জুড়ি নেই। Lasso Tool তিন প্রকার।

ক. Lasso Tool: এটিকে একটি পেন্সিল ভাবুন। পেনসিলের মত চাপ দিয়ে যতটুকু আঁকাবেন তারপর ছেড়ে দিলেই ঐ অংশটুকু সিলেক্ট হবে।
খ. Polygonal Lasso Tool: ধরুন আপনার হাতে খুটি ও তার সাথে বাঁধা সুতা দেওয়া হলো। এটিকে তাই মনে করুন। প্রথমে এক যায়গায় ক্লিক করে নিন খুটি পুতে যাবে। তারপর আবার আরেক জায়গায় ক্লিক করুন। তাহলে আরেকটি খুটি পুতবে। এভাবে ইমেজের বিভিন্ন জায়গা সিলেক্ট করতে পারবেন।

গ. Magnetic Lasso Tool: যারা আমার মত অলস তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটিতে তেমন কোন পরিশ্রম হবে না। শুধু ইমেজের যেখানে যেখানে যাবেন সেখানে এটি রং পার্থক্য দেখে সিলেক্ট করে যাবে। তবে এতে ভাল ফলাফল না আশাকরাই ভাল।

৪। Magic Wand Tool: ধরুন পাসপোর্ট সাইজের কোন ইমেজে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে আছে নীল আপনি হালকা নীল করতে চাচ্ছেন। তাহলে তাড়াতাড়ি করে Magic Wand Tool ব্যবহার করে নীল এর উপর ক্লিক করুন। তাহলে নীল অংশটুকু সিলেক্ট হবে। তাহলে আপনি সহজেই যে কোন কালার সিলেক্ট করতে পারবেন। হ্যা ভাই, বুঝতে পেরেছেন তাহলে এটি দিয়ে আপনি যে কোন এক রং এর উপর ক্লিক করেই সে অংশটুকু সিলেক্ট হয়ে যাবে।

৫। Crop Tool: এটি ব্যবহার করে আপনি ইমেজকে যে কোন সাইজে Crop বা রিসাইজ করতে পারবেন। এটিতে ক্লিক করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে নিচের মত আসবে। এখানে আপনি সাইজ দিয়ে ক্রপ করতে পারেন। (বোনাস টিপস- বর্তমান ইমেজের সাইজ দেখার জন্য Front Image এ ক্লিক করুন।

৬। Healing Brugh Tool: চকৎকার একটি টুল। এতে তিনটি পার্ট আছে।

ক. Healing Brugh Tool: একস্থান থেকে কপি করে আরেকস্থানে আনার জন্য উপযুক্ত ব্রাশ। এই টুলটি সক্রিয় করে যেখান থেকে কপি করে আনবেন শুধুমাত্র কিবোর্ড থেকে Alt চাপ দিয়ে ক্লিক করুন। তাহলেই হবে। তারপর যেখানে ড্র্যাগ করবেন সেখানেই কপি হয়ে যাবে।
খ. Patch Tools: এটা লেসোটুলের মতই তবে হয়ত একটু বিশেষত্ব আছে। এটা ক্লিক করে সক্রিয় করুন। তাহলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে এমন চিত্র দেখতে পাবেন।

তারপর লেসোটুলের মতই আঁকুন তারপর Use Pattern এ ক্লিক করুন। সুন্দর একটা প্যাটার্ণ হয়ে যাবে।

গ. Color Replacement Tool: এক কালারের পরিবর্তে আরেক কালার দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার হয়। কালার প্যালেটে শুধুমাত্র কালার সিলেক্ট করে ড্র্যাগ করুন।

৭। Brush Tool: ফটোশপের সবচেয়ে কার্যকরী টুল হল এটি।

ব্রাশ সম্পর্কে এর আগে পোষ্ট দিয়েছি। ব্রাশ টুল সিলেক্ট করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে এমন দেখতে পাবেন।

এখান থেকে বিভিন্ন ব্রাশ সিলেক্ট করতে পারবেন

ব্রাশের ষ্টাইল ও সাইজ নির্ধারণ করতে পারবেন

বিভিন্ন প্রকার মুড দিতে পারবেন এবং আরও অনেক কিছুই করতে পারবেন।

এখানকার ব্রাশ টুলে দুইটি টুল আছে। একটি ব্রাশ আরেকটি পেন্সিল।

৮। Stamp Tool: এখানে দুটি টুল আছে।

ক. Clone Stamp Tool: এটির ব্যবহার Healing Brugh Tool এর মতই। একস্থান থেকে কপি করে আরেকস্থানে আনার জন্য উপযুক্ত ব্রাশ। এই টুলটি সক্রিয় করে যেখান থেকে কপি করে আনবেন শুধুমাত্র কিবোর্ড থেকে Alt চাপ দিয়ে ক্লিক করুন। তাহলেই হবে। তারপর যেখানে ড্র্যাগ করবেন সেখানেই কপি হয়ে যাবে।
খ. Pattern Stamp Tool: প্যাটার্ন সম্পর্কে এর আগে আলোচনা হয়েছে। তারপরও বলছি বিভিন্ন প্যাটার্ন দেওয়ার জন্য এটির ব্যবহার।

এটি সক্রিয় করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবার থেকে আপনি বিভিন্ন প্যাটার্ন পছন্দ করে ছবিতে প্রয়োগ করতে পারেন।

৯। History Brush Tool: আপনারা হয়ত ইমেজকে বিভিন্ন ইফেক্ট দিয়ে ভরে ফেলেছেন। ইফেক্ট দিতে দিতে নাক, মুখ চোখের অবস্থা একেবারে কাহিল হয়ে গেছে। (ভয় পাবেন না আপনার না আপনার ছবির) তো এবার প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করুন এই টুলটি।

এখানে দুটো টুল পাবেন। ব্যবহার করে দেখুন কোনটি কেমন।

১০। Eraser Tool: নাম শুনেই বুঝে গেছেন!! হ্যা, এটি দিয়ে মুছতে বা ডিলিট করতে হয়। এতে তিনটি টুল আছে।

ক. Eraser Tool: এটা সিলেক্ট করে ড্র্যাগ করে আপনি অপ্রয়োজনীয় অংশ মুছতে পারবেন।
খ. Background Eraser Tool: ধরুন, আপনার কোন ছবিতে শুধুমাত্র নীল অংশটুকু ডিলিট করতে হবে। তাহলে এটি সিলেক্ট করে মাঝখানে প্লাস অংশ নীলের উপর রেখে ক্লিক করুন। নীল অংশটুকু ডিলিট হয়ে যাবে। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
গ. Magic Eraser Tool: ব্যাকগ্রাউন্ড ইরেজার টুল আর এইটির কাজ একই শুধুমাত্র একটু প্রার্থক্য হল ব্যাকগ্রাউন্ড ইরেজার টুল দিয়ে ইরেজ করলে টুলটির আকারের স্থানের অংশটুকু ইরেজ হবে। আর এটি দিয়ে ইরেজ করলে যতটুকু এক কালার আছে তার সবটুকুই ইরেজ/ডিলিট হবে।

১১। Gradient Tool: গ্রিডেন্ট হল বিভিন্ন কালারের সমন্বয়। এখানে দুইটি টুল আছে।

ক. Gradient Tool: নিচের চিত্রটি দেখুন। এটি হল একটি গ্রিডেন্ট।

গ্রিডেন্ট টুল সক্রিয় করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে এরকম দেখতে পাবেন।

এখানে বিভিন্ন গ্রাডিয়েন্ট নির্বাচন, সাইজ ও বিভিন্ন পরিবর্তন করতে পারবেন।

খ. Paint Bucket Tool: এই টুল দিয়ে বিভিন্ন রকম প্যাটার্ন দিতে পারেন। তবে এজন্য অবশ্যই Fill থেকে প্যাটার্ন সিলেক্ট করুন।

এবং মনের সুখে প্যাটার্ন দিতে থাকুন

Blur Tool: ছবি মসৃন করার জন্য এটির ব্যবহার হয়। এটি সক্রিয় করলে নিচের মত ষ্ট্যান্ডার্ড টুল বারে আসবে। এখান থেকে আপনি বিভিন্ন অপশন চেইঞ্জ করতে পারেন।

Sharp Tool: ছবিকে সার্প করার জন্য।

Smudge Tool: এটা দিয়ে সহজেই ছবিতে কোন দাগ থাকলে তা মুছে দিতে পারেন। এজন্য এটি সিলেক্ট করে দাগের সমপরিমাণ সাইজ করে ছবিতে ড্র্যাগ করুন।

Dodge Tool: অত্যন্ত কার্যকরী টুল। এখানে তিনটি সাব টুল আছে।

Dodge Tool: এই টুল দিয়ে ছবির ব্রাইটনেস বাড়ানো বা আলো দেওয়া যায়।

Burn Tool: এটার কাজ ঠিক Dodge Tool এর উল্টো। অর্থাৎ এটি দিয়ে ব্রাইটনেস কমানো বা কালো করা হয়। যেমন, চুল কালো করা, চোখের মনি কালো করা, ভ্রু কালো করা ইত্যাদি।

Sponge Tool: ছবিতে Sponge দেওয়ার জন্য। এখানে দুটো অপশন আছে।

Path Selection Tool: এখানে দুটো সাব টুল আছে

Path Selection Tool: ছবিতে কোন প্যাথ বা লেয়ার সিলেক্ট করার জন্য।

Direct Selection Tool: পুরো লেয়ার সিলেক্ট করার জন্য।

Pen Tool: ফটোশপের কার্যকরী একটি টুল। এতে ৫টি সাব টুল আছে।

Pen Tool: পেন টুলের সাহায্যে ছবিকে সিলেক্ট করা যায়। লেসো টুল দিয়েও ছবি সিলেক্ট করতে পারেন। কিন্তু লেসোটুলো ছবি সিলেক্ট করার পর আনডু বা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় না। কিন্তু পেন টুলে সহজেই আপনি ধাপে ধাপে করতে পারেন। এতে ছবি সিলেক্ট করা একটু কঠিন তবে এতে ছবির মান ভাল হয়।

FreeForm Pen Tool: স্বাধীন ভাবে ছবি সিলেক্ট করার জন্য।

Add Anchor Point Tool: প্যাথ অ্যাড করার জন্য এটির ব্যবহার। অবশ্য এটি আপনি কিবোর্ড থেকে Shift ধরেও করতে পারেন।

Delete Anchor Point Tool: প্যাথ রিমুভ করার জন্য এটির ব্যবহার। অবশ্য এটি আপনি কিবোর্ড থেকে Alt ধরেও করতে পারেন।

Convert Point Tool: আপনার আকানো সব প্যাথকে একটি প্যাথে কনভার্ট করার জন্য।

Notes Tools: ছবিতে কোন নোট বা কথা থাকলে তা সেভ করার জন্য এটিকে ব্যবহার করতে
পারেন।

Audio Annotation Tool: ছবিতে রেকর্ড করা কথা যোগ করার জন্য এটির ব্যবহার। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার মাইক্রোফোন থাকতে হবে।

Hand Tool: ছবিকে মুভ করার জন্য এটির ব্যবহার।

পূর্বে তিনটি ধাপে প্রকাশিত হয়েছিল আমার নিজের ব্লগে:

ধাপ: এক, ধাপ: দুই, ধাপ: তিন

ফটোশপের আরো কিছু টিউটরিয়াল দেখুন:

বড় একটি অবস্থানের ছবি এবং কয়েকটি অংশেভাগ করে তোলা এবং ফটোশপে তা একত্রিত করন

ফটোশপ: কালার ইলিউশন

ফটোশপ ব্যবহার কারীর ১১ টি সাধারন ভুল

4 thoughts on “ফটোসপ বেসিক: টুলবক্স পরিচিতি”

  1. আসলেই রাসেল অনেক ধয্য সহকারে পোস্টটি লিখেছে। ছবিগুলো সাজিয়েছেও অনেক কষ্ট করে। বাংলাদেশে রাসেলের চেয়ে বেশি বেশি টিউটরিয়াল লিখতে কাউকে দেখি না।

  2. খন্দকার ফয়েজ আহম্মেদ

    অনেক দিন থেকে এমন একটা পোস্ট খুজছিলাম। ধন্যবাদ রাসেল ভাইকে।আশা করি সবাই উপকৃত হবে।

  3. এক পোষ্টেই সম্পূর্ণ টুলবক্স পরিচিতি 😮 . আমি হলে পারতাম না। আমার ইংরেজি ব্লগে টুলবক্স নিয়ে ৪টা পোষ্ট লিখেছে। আসলেই রাসেলের অনেক ধৈর্য আছে…ব্যবসায়ী মানুষ তো তাই …. :d … ধন্যবাদ…..

Leave a Comment