ওয়েব জগতে নতুন উদ্যোগ নেয়ার বেপারে কিছু তথ্যপূর্ণ উপদেশ

নিজের একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ বানানোর বেপারে অনেকেই আগ্রহী হয়। নিজস্ব ক্ষুদ্র চিন্তা থেকে অনেকেই ওয়েবে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছেন। অনেকেই এক একটি উদ্যোগ নিয়ে সফলতার পথে এগিয়ে চলেছেন। আবার অনেকেই বেশ বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েও খুব বেশি দূর এগুতে পারেনা এবং কিছু দিন চেস্টা করার পর হাল ছেড়ে দেয়। ওয়েবের জগতে কাজ করে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু তথ্য ও উপদেশ শেয়ার করছি এই পোস্টে।

ওয়েব জগতে নতুন উদ্যোগ নেয়ার বেপারে তথ্যপূর্ণ আড্ডা

নিজের আইডিয়া শেয়ার করা না করা

ওয়েবে কাজ করার সবচেয়ে সুবিধা জনক দিক হলো যে কোন জায়গা থেকেই কাজ করা যায়। এ জন্য অনেকে নিজের একটি উদ্যোগ নিয়ে নিজেই কাজ শুরু করে , অন্য কাউকে জানায় নি বেপারটা। এ ক্ষেত্রে কয়েক ধরেনর ঘটনা ঘটে।

১. নিজের আইডিয়াটা সবাইকে জানালে আইডিয়া চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। নিজের উদ্যোগটি কোন কারনে দ্রুত বাস্তবায়ন কারা সম্ভব না হলে অন্য কেউ এই কাজ শুরু করতে পারে।

২. অনেকে নিজের কাজটি বাস্তবায়ন করতে অন্যকে সঙ্গে নিতে চায় না বা অংশিদারের ভিত্তিতে কাজটি করতে চায় না। নিজের মালিকানা নিজেরই থাক-ভাবটা এরকম। কিন্তু আমি মনে করি অনেকে মিলে কাজ করলে কাজটি সফল হওয়া সহজ। একা ১ টাকা আয় করা ভাল না দুই জনে ৩ টাকা আয় করা ভাল হবে? নিজের একটি ওয়েব ব্যবসা শুরু করতে গেলে এ বিষয়গুলো অবশ্যই ভাবতে হবে।

আইডিয়া শেয়ার না করলে যে সব সমস্যা হতে পারে:

১. বিষয়টির পরিপূর্ণতা না পাওয়া: আপনি যে বিষয়ে একটা কাজ করতে যাচ্ছেন তা যদি একা একা করেন তাতে অনেক নতুন বিষয় যুক্ত করা, কিছু বিষয় থেকে সরে যাওয়া উচিৎ তা হয়তো আপনার জানাই হবে না।

২. অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস: নিজের প্রোজেক্টের বেপারে নিজের আত্নবিশ্বাস অনেক বেশি থাকে । আপনি অন্য কাউকে কথাটি বলতে না পারলে আপনার অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস আপনার প্রোজেক্টের জন্য এক সময় ক্ষতির কারন হবে।

৩. আত্নবিশ্বাস দিন দিন কমে যাওয়া: কোন একটি প্রোজেক্টের বেপারে আগে থেকে ধারণা করতে হবে , কতটুকু সময়ে কতটুকু সার্থকতা আসবে। এ ধারণা না করতে পারলে পরে হয়তো প্রোজেক্টের অগ্রগতির বেপারে হতাশ হতে বেশি সময় লাগবে না। আইডিয়া শেয়ার করলে এই সমস্যার অনেকটা লাঘব হতে পারে।

৪. নিজের জ্ঞানের সিমার বাইরের প্রোজেক্টের বেপারে সমস্যা: আপনি যে ওয়েব সাইট বানাতে যাচ্ছেন তার সম্পূর্ণটা কি আপনার জ্ঞানের সীমার মধ্যে আছে? না থাকলে অবশ্যই এটি নিয়ে কয়েকজন বিজ্ঞ লোকের সাথে কথা বলতে হবে। আর তা না করে শুরু করলে পরিপূর্ণতা পাবে না আপনার প্রোজেক্ট।

আপনার উদ্যোগ, আপনার অংশিদার এবং আপনার পারিপার্শিকতা:

আপনার একটি কাজকে সফল করার বেপারে সবচেয়ে সুবিধাজনক হয় এমন একজন অংশিদার নেওয়া যার মধ্যে এমন কিছু আছে যা আপনার মধ্যে নাই। এ বেপারে আমার প্রথম সফল ওয়েবসাইট টিউটরিয়ালবিডি’র কিছু ব্যক্তিগত কথা বলি। যখন আমি টিউটরিয়ালবিডি তৈরী করি সেই সময় আমি নিতান্তই বেকার ছেলে,মাত্র অনার্স পাস করে বের হয়েছি। সেই বেকার সময়টাকেই কাজে লাগাই টিউটরিয়ালবিডিতে, আমার এক বন্ধু জাপান থাকে তাকে বললাম এমন এমন প্লান করেছি। সে স্বেচ্ছায় আমার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয় এবং ডোমেইন হোস্টিং সহ অণ্যান্য সকল খরচ বহন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এভাবে আমাদের সাইট ভালই চলছে। আপনার নতুন উদ্যোগটি নিতে ভেবে দেখুন কাদেরকে আপনার সঙ্গে নিবেন। আপনার প্রোজেক্টে কারা কারা সাহযোগিতা করতে পারে-

১. ঘুমন্ত অংশিদার: যেটার কথা বললাম কিছুক্ষন আগে, সে হয়তো আপনাকে কিছু কিছু বেপারে সহযোগিতা করতে পারবে। সম্পূর্ণ সক্রিয় ভাবে সাথে নাও থাকতে পারে। দেখা গেল আপনার সাইটের যে কোন একটি দায় সে নিয়েছে, যেমন-সাইট ডিজাইন বা সাইটের হোস্টিং খরচ বা সাইটের মার্কেটিং এ সহযোগিতা।

২. বেতভূক্ত : আমি নিজে বেশ কয়েকজনের প্রোজেক্টে নির্দিষ্ট সময় কাজ করে টাকা নিয়েছি। নিজের সাইট বানালে এটা চালানোর জন্য নিজে শ্রম না দিতে পারলেও অণ্যকে দিয়ে কাজটি করাতে পারলে বেশ সুবিধা হতে পারে। মানুষ দুই ধরনের কাজ করে- কেউ কাজের পারিশ্রমিক সাথে সাথে চায়। আবার কেউ অনেকদিনের জন্য ইনভেস্ট করে একবারে বেশি লাভবান হতে চায়। আপনি দ্বিতীয় ব্যক্তি হলে প্রথম ব্যক্তিকে সাথে নিতে পারেন। আর আপনি প্রথম ব্যক্তি হলে দ্বিথীয় ব্যক্তির সাথে কাজ করতে পারেন। এখানে উভয়েরই লাভ।

৩. কাছের বন্ধু: নিজের কাছাকাছি বন্ধুরা আপনার এ কাজে উৎসাহ দিয়ে বা অন্যভাবে সহযোগিতা করতে পারে। আপনার হয়তো কোন ধরনের লোকের প্রয়োজন সেই লোক যোগার করে দিতে আপনার বন্ধু।

৪. নিজের সামজিক নেটওয়ার্ক: আমি আমার আরেকটি পোস্টে সামাজিক নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ কারার বেপারে বলেছি। কিভাবে সামাজিক নেটওয়ার্ক আপনার ব্লগকে সহায়তা করতে পারে তার উপরে আমার এই পোস্টটি দেখতে পারেন।

আপনার কাজের সাথে যাকেই নিবেন না কেন তার সাথে প্রথম থেকেই সবকিছু সুন্দরভাবে আলোচনা করে নিবেন। এবং আপনার কাজের পরিধি, তার কাজে কর্ম ইত্যাদি বুঝিয়ে দেবেন।

ব্যক্তি হিসেবে একজন মানুষ কেমন তাও নিজেদের কাজে দরকারি । আর নিজের আগ্রহ ঠিক মতো ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা আগেই বুঝে নিন।

আশার কথা আমাদের দেশের ওয়েবসাইটগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রসংশিত হচ্ছে। দিন দিন এ দেশ বিশ্ব মানের ওয়েবে এগিয়ে যাচ্ছে। ভাল কোন ইনভেস্টর এদেশের ছেলেদের নিয়ে বড় কোন উদ্যোগ নিলে আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করি।

এত কষ্ট করে এই লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করি মতামতে আপনাদের অনুভুতি জানাবেন। সবাইকে আমার পরবর্তি লেখার আমন্ত্রন জানিয়ে শেষ করছি।

ব্যান্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর আমার এ পোস্টিটি কাজে লাগার মতো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্লগে পূর্বে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে ।

2 thoughts on “ওয়েব জগতে নতুন উদ্যোগ নেয়ার বেপারে কিছু তথ্যপূর্ণ উপদেশ”

  1. ডাঃ মতিউর রহমান

    সালাম নেবেন।

    আমি একটা ডাক্তারী সংক্রান্ত ওয়েবসাইট খুলতে চাচ্ছি। সেখানে বিভিন্ন রোগ, চিকিৎসা, ঔষধপত্র, বিধিব্যবস্থা, প্যাশেন্ট ম্যানেজমেন্ট, বিলিং, ক্রেডিটকাড পেমেন্ট, রোগীদের মন্তব্য ইত্যাদি নানা বিষয় যুক্ত থাকবে। আয়তন ২০০/৩০০ ছবিসহ প্রায় ১,০০০ পৃষ্ঠা হতে পারে।

    এব্যাপারে আপনি কিভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন?

    সাইট ডিজাইনিং, মেকিং, কত খরচ পড়তে পারে?

    ডোমেইন রেজিঃ বা হোস্টিং পরে চিন্তা করা যাবে।

    দ্রুত জানান।

    ধন্যবাদান্তে,
    ডাঃ মতিউর রহমান
    ঢাকা, বাংলাদেশ।

    1. @ডাঃ মতিউর রহমান,স্যার আপনার উদ্যোগটি বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে খুবই জরুরী দরকার- কারন যারা ওয়েব দুনিয়ায় কাজ করছে তাদের অধিকাংশই ডাক্তারি লাইনে কাঁচা। আসলে সাইটে তথ্যগুলো কিভাবে সন্নিবেশিত থাকবে তার উপর নির্ভর করে খরচের বেপারটা। যদি ব্লগে যেমন এই সাইটের মতো করেন তাহলে খরচ অনেক কম পরবে। কোন সাইটের উদাহরন সহ রিকয়্যারমেন্ট mahbubpalash(at)yahoo(dot)com এ মেইল করলে বলতে পারবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Leave a Comment