প্রোফেশনাল জীবনের ঘাত প্রতিঘাত: নিজেকে শুধরে নেওয়া

ছাত্র জীবনের শেষ মূহুর্ত থেকেই ছোট কোন একটা আয়ের পথ খুজতেছিলাম । টাকা আয়ের বেপারটা কখনোই আমার কাছে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে ধরা দেয়নি। সেই সময়ে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যটা ছিল নিজের বাড়তি খরচটাকে চালানোর জন্য। এমন কোন কাজ খুজছিলাম যেটার মধ্যে থাকলে পড়ালেখার বেঘাত হবে না,আবার সময়টাকেও বেধে নেয়া যাবে। ছোট বেলা থেকেই অনেকটা ভিরু আর আত্নকেন্দ্রিকতা অনেকের সাথে আমার পরিচয় হতে দেরী করিয়ে দেয়। সেই সময়টা পার হয়েছে। ফুল টাইম চাকরী করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাকে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। নিজের মধ্য থেকে জড়তা তারাতেও সময় নেয় অনেক। নতুন চাকরীতে যোগদানের পর যে সব সমস্যা আর ঝায় ঝামেলায় আমাকে পড়তে হয়েছে তারই উপর আমার এ পোস্ট। এখানে প্রোফেশনালদের চলাফেরা, আচার আচরন,বস কি কি বিষয় অপছন্দ করেন তার উপরও আমার নিজের জীবনের আলোকে বর্ণনা করবো।

প্রোফেশনাল

কথা বলা

নতুন কোন পরিবেশে গেলে অপরিচিত জনের সাথে কাজ করেতে গেলে কথা বলতে কিছু সমস্যা হতেই পারে। আমি নিজে প্রোফেশনাল জীবনের প্রথমদিকে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তাম কথা বলা নিয়ে। বসের প্রশ্নের উত্তর দিতাম একেবারে নিচু স্বরে। এক কথা আমাকে কখনো দু’বারও বলতে হতো। কিছু লোক হয়তো আপনার এ ভাল মনুষিটাকে ভাল ভাবতে পারে তবে কাজ করতে গেলে যে স্বাভাবিক আর সঠিক কথাটি ব্যক্তিত্বের সাথে বলার বিকল্প নাই। যাদের সাথে কাজ করেন তাদের সাথে কো-ওপারেশন একটা পর্যায়ে রাখতে হবে যাতে আপনার উপর কেউ চেপে বসতে না পারে, কেউ আবার আপনার কথায় মর্মাহত না হয় সেটাও দেখার বেপার। আরেকটা কথা (চাকরীর প্রথমদিকে) অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ও আপনার জানা বিষয়গুলোতে আলোচনা করুন। অন্যরা হয়তো আপনার সাথে কিছু কথা আলোচনা করতে চায় না, সে বেপারটিতে আগ্রহ দেখানোর দরকার নেই। যে কাজটি আপনার নয় সে দিকে অনেক আলোচনা সমালোচনার ঝড়ের মধ্যে নিজের নিরপেক্ষতা রক্ষা করে চলুন।

সিদ্ধান্ত/তথ্য দেওয়া:

আপনার অফিস কলিগ থেকে বস পর্যন্ত সবাই আপনার কাছ থেকে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে পারে। কখনোই এমন সিদ্ধান্ত দিবেন না যাতে বিষয়টি ঝাপসা মনে হয়। ধরুন, আপনি একজন এডমিন অফিসার, জিএম আপনাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো আইটি অফিসার এসেছে? আপনি না জানলে বলবেন জানাচ্ছি স্যার। কিন্তু কখনোই মিথ্যা তথ্য দিবেন না। প্রফেশনাল কাজে একটি বিষয়ের উপর নির্ভ করে আরেকটি কাজ হয়। তাই তথ্য অনেক প্রয়েজনীয় বিষয়। এমন হতে পারে যে আপনাকে অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব দিতে হয় বসের কাছে। বস কিন্তু আপনার সারা দিনের কাজের বেপারটা দেখেন না। সে কিছু প্রশ্ন করেই আপনাকে যাচাই করে নেবে। তাই মাথায় রাখুন প্রয়োজনীয় তথ্য।

সমাধান দেওয়া

প্রতিষ্ঠানের কোন সমস্যা হাজির হলে যদি সেটা আপনার বসকে জানান তাহলে বেপারটা ভাল হয় না। ভাল হয় যদি সম্ভাব্য সমাধানটিও করে দেন বা বলে দেন। মনে রাখতে হবে-প্রতিটি বিষয়েরই সমাধান আছে। ধরুন, আপনি আইটি অফিসার/ম্যানেজার, নতুন একটি অফিস সেটআপ হয়েছে। আপনাকে বলা হলো নেটওয়ার্কের সব ব্যবস্থা করতে । এ কথা বলার আগেই আপরাকে হিসেব শেষ করে রাখতে হবে- ক. কি ধরনের নেটওয়ার্ক করবেন খ. কি কি লাগবে? খরচ কত হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি । সবচেয়ে ভাল পদ্ধতিটির প্রস্তাবনা করবেন প্রথম, তার বাজেটের কথা বলে দিবেন। কোন একটি বিষয়ে মতবিরোধ হতে পারে, বিষয়টিকে স্পস্ট করে একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত দিতে হবে আপনাকে। আমি জানি যে, বসেরা কখনো ঝামেলায় না গিয়ে দ্রুত কাজটি সমাধানের চেস্ট করে-তাই আপনাকে বেশি সময় দিতে চাইবে না অনেক কাজেই, প্রতি বিষয় বুঝানোর জন্য আপনি কিছু নোট আকারে সমাধান দিতে পারেন। ধরুন, আনাকে বললো ১৫টি কম্পিউটারের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক একদিনের মধ্যে করে দিতে। কিন্ত আপনি জানেন দুইদিন সময়ের লেগে যেতে পারে। তা অবশ্যই উপযুক্ত কারন সহ জানাতে হবে। আজ কি করবেন, আগামী কাল কি করবেন তার একটি তালিকাও প্রয়োজনে করে নিবেন। বেশি বেশি সমস্যার কথা বলেবেন না।

নতুনত্ব ও খাপ খাওয়ানো

নতুন পরিবেশে অনেক কিছুই আপনার ভাল নাও লাগতে পারে। আপনার মনে হতে পারে এ নিয়ম বদলানো দরকার। কিন্তু সাথে সাথে নতুন আইনটি চালু করার বেপারে আমি না রাজ। আপনি পরিবেশটি অনুধাবন করুন-প্রথম। আমি দেখেছি নতুন অনেক ম্যানেজারই নতুন নতুন অনেক আইন প্রথমে চালু করে পরে সেই আগের মতোই হয়ে যায়। তার পর দেখা যায় সবাইকে পরিবর্তন না করে সে নিজেই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আবার পরিচয়ের প্রথমে অনেক অকর্মা লোকের তোষামোদের ফাদেও পড়েন অনেকে।  ব্যস্ত লোকগুলো তাদের কাজের কারনে হয়তো পরিচিত হতে সময় পায় নি হয়তো। পারস্পরিক সম্পর্কের বেপারে নিরপেক্ষতা,কর্মদক্ষতা,সততা ইত্যাদির মূল্যায়ন করুন। যাদের নিয়ে আপনাকে কাজ করতে হবে তাদের নাম জানা,মোবাইল নম্বর,মেইল ঠিকানাও সংগ্রহ করে নিন।

এগুলো আমার প্রোফেশনাল জীবনের শিক্ষা থেকে নেওয়া। আমি সামনের দিনগুলোতে নিজের ব্যক্তিত্বের উপর কথা বলার চেস্টা করবো। একটু ভিন্ন ধর্মী এ পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন।

4 thoughts on “প্রোফেশনাল জীবনের ঘাত প্রতিঘাত: নিজেকে শুধরে নেওয়া”

    1. @dux, আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন। আমি আসলে নিজের মতো করে লিখতে চেস্ট করি। চাকরীর পাসাপাসি এ কাজটা অনেকটা সখ, অনেকটা সামাজিক দায়। ধন্যবাদ আপনাকে।

Leave a Comment