বাস্তব সংখ্যা

সংখ্যা কি? কিভাবে সংখ্যা তৈরী করা হয়? সংখ্যা তৈরির উদ্দেশ্য কি?সংখ্যা বলতে আসলে আমরা কি বুঝি? সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা কি?

আমরা দৈনন্দিন কাজে বিভিন্ন গনণা করে থাকি। যেমন এক কেজি চাল অথবা তিনটা ডিম। এই এক কেজি চাল বলতে আমবাস্তব সংখ্যারা

আসলে কি বুঝাই অথবা তিনটা ডিম বলতে আমরা আসলে কি বুঝাই? চিন্তা করলে দেখা যাবে আমরা আসলে কোন জিনিসের নির্দিষ্ট পরিমান বোঝাই। কোন জিনিস “কতটুকু” আছে তাই বোঝাই। এই “কতটুকু” জিনিসটাকে আমরা সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করি। যেমন এক কেজি চালের “এক”, তিনটা ডিমের “তিন”। উল্লেখ্য যে “এক” কেজি চালের সাথে “কেজি” যুক্ত কিন্তু তিনটা ডিমের সাথে এই জাতীয় কোন কিছু যুক্ত নয়। কেন? কারণ তিনটা ডিম বোঝাতে আমরা মূল “একটা ডিম”-কে এই কেজির পরিবর্তে ব্যাবহার করছি। এক কেজি চাল বোঝাতে যেমন নির্দিষ্ট পরিমান চাল বোঝায় তেমন তিনটা ডিম বোঝাতে একটা ডিমের নির্দিষ্ট পরিমানের কয়েক গুন বোঝায়। যদি আমরা বলি দুই কেজি চাল তাহলে কিন্তু বোঝা যায় যে এক কেজি চালের নির্দিষ্ট পরিমানের কয়েক গুণ।

আমরা এক্ষেত্রে কি করছি? আমরা কোন জিনিসের কোন নির্দিষ্ট পরিমান (কিছু চাল বা ডিম) কে মূল পরিমান হিসেবে ধরছি এবং এর নাম দিচ্ছি একক বা এক (এক কেজি চাল, একটা ডিম)। তারপরে এই এককের উপর ভিত্তি করে আমরা আরো কিছু একক একসাথে যুক্ত করে পরিমান বৃদ্ধি করছি (দুই কেজি চাল, তিনটা ডিম) এবং এই বৃদ্দিপ্রাপ্ত এককের একটা নিদ্দিষ্ট নাম দিচ্ছি, যেমন দুই, তিন। আমরা জানি একককেও ভাঙ্গানো যায়, যেমন অর্ধেক বা এক চতুর্থাংশ।

আমরা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে সংখ্যাগুলোকে ব্যাবহার করছি যেমন এক, দুই, তিন, চার ইত্যাদি। আচ্ছা এই সংখ্যাগুলোকে যদি লিখি তাহলে কেমন দেখায়??

১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০, ৫০০০, ৩৪২, ৯৯৭৪২ ইত্যাদি। আমরা এখানে খেয়াল করলে দেখতে পাব যে এইখানে বিভিন্ন সংখ্যাগুলো যখন লেখা হল তখন কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন ঘুরেফিরে ব্যাবহার করছি। এই নির্দিষ্ট চিহ্নগুলো হল ০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯। এই দশটা চিহ্ন ব্যাবহার করেই আমরা বিভিন্ন সংখ্যাকে প্রকাশ করছি। এই দশটা চিহ্নকে বলা হয়ে থাকে “পাটিগাণিতিক” প্রতীক বা চিহ্ন বা অংক। পাটিগণিত বলতে আসলে আমরা কি বুঝি? পাটিগণিত হল আমাদের প্রতিদিনের জীবনের গণিত অর্থাৎ প্রতিদিন চলার পথে আমরা যেইসকল হিসাব নিকাশ করি, সেইসকল হিসাব নিকাশ ও তার বিভি

ন্ন পদ্ধতিই হল পাটিগণিত। কিন্তু উচ্চতর বিজ্ঞানে এবং বিভিন্ন ধারণায় সংখ্যার বৈচিত্রতা কেবল পাটিগাণিতিক সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সেখানে আমরা অন্য বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা ও সংখ্যা পদ্ধতির সাথে পরিচিত হই। পাটিগণিতে কেবলমাত্র দশমিক প্রণালীর সংখ্যা ব্যাবহার করা হয় এবং এর ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ।

সংখ্যাকে হিসাব ও বিশ্লেষনের সুবিধাধার্থে কয়েকভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে এক ভাগের নাম হচ্ছে “বাস্তব সংখ্যা”। এই “বাস্তব সংখ্যা” আবার কয়েকভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথমেই আমরা জানব বাস্তব সংখ্যা কি।

বাস্তব সংখ্যা হল সেই সকল সংখ্যা যাদের বাস্তব আস্তিত্ব আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে তাদের ব্যাবহার করে থাকি সাধারণত।

বাস্তব সংখ্যা যে সকল ভাগে বিভক্ত তা হলঃ

১। গণনাকারী বা স্বাভাবিক সংখ্যা,

২। পূর্ণ সংখ্যা,

৩। মূলদ সংখ্যা,

৪। অমূলদ সংখ্যা।

গণনাকারী বা স্বাভাবিক সংখ্যাঃ

আমরা প্রতিদিন “সাধারণ গণনা কাজে” যে সকল সংখ্যা ব্যাবহার করি তাই গণনাকারী বা স্বাভাবিক সংখ্যা। এখানে “সাধারণ গণনা কাজ” বলতে বোঝানো হয়েছে আমরা এখানে কোন একক সংখ্যাকে বা এক(১) কে ভাগ করব না। অর্থাৎ অর্ধেক, দেড়, আড়াই, এক চতুর্থাংশ এখানে অন্তর্ভুক্ত নয়। স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো হচ্ছে ১,২,৩,৪,৫,৬,……………। উল্লেখ্য শূন্য এখানে অন্তর্ভুক্ত নয়।

পূর্ণ সংখ্যাঃ

আমরা এখন সকল ঋণাত্বক সংখ্যা ও শূন্যকে যদি সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সাথে একত্রিত করি তাহলে আমরা যে সংখ্যাগুলো পাব তাই পূর্ণ সংখ্যা। অর্থাৎ স্বাভাবিক সংখ্যা ১,২,৩,৪,৫,৬,………… এবং শূন্য(০) এবং -১,-২,-৩,-৪,-৫,-৬………… এই সবগুলো সংখ্যাকেই পূর্ণ সংখ্যা বলা হয়। এখানে আমরা দেখতে পাই সকল স্বাভাবিক সংখ্যাই পূর্ণ সংখ্যা কিন্তু সকল পূর্ণ সংখ্যাই স্বাভাবিক সংখ্যা নয়।

মূলদ সংখ্যাঃ

উপরের উল্লেখিত সংখ্যাগুলোতে আমরা লক্ষ্য করেছি যে কোন দশমিক সংখ্যা ( যেমন ১ দশমিক ৭৫ অথবা ১/২ অর্থাৎ ০ দশমিক ৫ ) সেখানে অন্তর্ভুক্ত নয়। এইবার আমরা দশমিক সংখ্যাগুলো নিয়ে কাজ করব। দশমিক সংখ্যা আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ সাধারণ বা সসীম দশমিক এবং পৌনপুনিক দশমিক এবং অসীম দশমিক।

সাধারন দশমিক সংখ্যা বা সসীম দশমিক সংখ্যাঃ

এই দশমিক সংখ্যাগুলোতে দশমিকের ঘরের পরে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক সংখ্যা থাকে। যেমন ২ দশমিক ৫৭৬৮৭২। এখানে ২ এর পর দশমিক এসেছে এবং দশমিকের পর ৫৭৬৮৭২ এসেছে। এখানে আমরা দেখতে পাই যে দশমিক অংশে অর্থাৎ ৫৭৬৮৭২ -এ আমদেশ শেষ দশমিক অংকটি ( এখানে অংক বলতে এই লেখার তৃতীয় অনুচ্ছেদের “অংক” বোঝাচ্ছে ) ২ এবং এর পরে আমরা আর কোন দশমিকের অংক পাচ্ছি না। অর্থাৎ দশমিক এর পরের অংকগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক এবং আলোচ্য ২ দশমিক ৫৭৬৮৭২-এ দশমিকের অংক মোট ছয়টি। যদি কোন সংখ্যায় দশমিকের অংক নির্দিষ্ট থাকে তবে তাকে সসীম দশমিক বলা হয়। যেমন ০ দশমিক ৫ বা ৬ দশমিক ৭৮২৯৩৪৭৮০৯৮৯৮২৩৮৪৯।

পৌনঃপুনিক দশমিক বা আবৃত দশমিকঃ

এই ক্ষেত্রে আমরা এমন কিছু দশমিক সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করব যাদের দশমিকের পরে সসীম সংখ্যক বা নির্দিষ্ট সংখ্যক অংক থাকে না তবে একই অংকের বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। যেমন ৪ দশমিক ২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪……… অথবা ৩ দশমিক ৩৩৩৩৩৩৩৩৩……… অথবা ৫ দশমিক ৪৫৬৬৬৬৬৬৬৬৬৬…………। এই ধরণের দশমিকগুলোতে দশমিকের পরের অংকগুলো সসীম না না হলেও নির্দিষ্ট কিছু অংকের বারবার একই ক্রমে পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। দশমিকের পরে এ ধরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে যে সকল সংখ্যায় তাদেরকে পৌনঃপুনিক দশমিক বা আবৃত দশমিক বলে।

অসীম দশমিকঃ

যে সকল সংখ্যায় দশমিকের পরে সসীম সংখ্যক অংক থাকে না বা পৌনুপুনিকতাও দেখা যায় না সে সকল সংখ্যাকে অসীম দশমিক বলে। যেমন ২ এর বর্গমূল ১ দশমিক ৪১৪২১৩৫৬২৩৭৩০৯৫০৪৮৮০১…………… অথবা ধরি এমন একটি সংখ্যা ১ দশমিক ০১০০১০০০০১০০০০০০১০০০০০০০০০১………। এখানে দশমিকের পরে না আছে সসীম সংখ্যক অংক, না আছে পৌনঃপুনিকতা। এ ধরনের দশমিককে বলা হয় অসীম দশমিক।

এখন আমরা দেখব এই সকল দশমিকের মধ্যে মূল পার্থক্যটা কোথায়। আমরা লক্ষ্য করে দেখতে পারি যে, সসীম দশমিক বা পৌনঃপুনিক (আবৃত) দশমিক সংখ্যাগুলকে দুইটি “পূর্ণ সংখ্যার” ভগ্নাংশে পরিণত করা যায়। যেমনঃ ০ দশমিক ৫ হল, ১/২; ৩ দশমিক ৩৩৩৩৩৩৩ হল ১০/৩, ৪ দশমিক ২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪………… হল ৩০/৭, ৫ দশমিক ৪৫৬৬৬৬৬৬৬৬৬৬……..হল ৪৯১১/৯০০, ২ দশমিক ৫৭৬৮৭২ হল ৩২২১০৯/১২৫০০০ । কিন্তু অসীম দশমিকগুলোকে এইরকম দুইটি পূর্ণ সংখ্যার ভগ্নাংশে পরিণত করা যায় না।

মূলদ সংখ্যা হচ্ছে সকল পূর্ণ সংখ্যা (…………-৩,-২,-১,০,১,২,৩………) এবং এই সসীম ও পৌনঃপুনিক সংখ্যাগু

লি। অর্থাৎ অসীম দশমিকগুলো মূলদ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত নয়। অসীম দশমিকগুলো বাদে বাকী সব সংখ্যাই মূলদ সংখ্যা।

অমূলদ সংখ্যাঃ

সকল অসীম দশমিক সংখ্যাই অমূলদ সংখ্যা। অর্থাৎ মূলদ সংখ্যা বাদে বাকী সকল সংখ্যাই অমূলদ সংখ্যা। এই অমূলদ সংখ্যাগুলকে দুইটি “পূর্ণ সংখ্যা”র ( বাস্তব সংখ্যার ২য় ভাগ) ভগ্নাংশরুপে প্রকাশ করা যায় না। কয়েকটি “স্বাভাবিক সংখ্যা”র বর্গমুল যেমনঃ ২ বা ৩ এর বর্গমূল অমূলদ সংখ্যা। অমূলদ সংখ্যাকে কোন স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা গুণ-ভাগ বা যোগ-

বিয়োগ করলেও তা অমূলদ সংখ্যা হয়। যেমন বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি অমূলদ সংখ্যা। যদি কোন বৃত্তের ব্যাস মুলদ সংখ্যা হয় তবে তার পরিধি একটি অমূলদ সংখ্যা।

আমরা বাস্তব জীবনে সংখ্যার এই চারটি রুপই দেখতে পাই সাধারণত। তাই এই সকল সংখ্যাকে বাস্তব সংখ্যা বলা হয়ে থাকে।

https://tutorialbd.com/wp-content/uploads/2010/02/Noname.jpg

পরবর্তী পর্বে আমরা গাণিতিক দৃষ্টিকোন থেকে বাস্তব সংখ্যার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করব।

5 thoughts on “বাস্তব সংখ্যা”

  1. রাজ মো. আশরাফুল হক বারামদী

    ভাইয়া লেখার শেষের ইউআরএল এ দেওয়া ছবিটা যোগ করে দিয়েন দয়া করে।

  2. টিউটরিয়ালবিডিতে অনেকদিন পরে আবার ফিরে আসাতে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংখ্যা সমন্ধে জানলাম,ভুলে গিয়েছিলাম অনেক কিছু।
    .-= টিউটো´র শেষ পোস্ট: >>HTML এ Font ট্যাগের ব্যবহার (HTML টিউটোরিয়াল – 6) =-.

  3. Wow, superb blog layout! How long have you been blogging for? you make blogging look easy. The overall look of your web site is wonderful, let alone the content!. Thanks For Your article about বাস্তব সংখ্যা | টিউটোরিয়ালবিডি .

Leave a Comment