বঙ্গবুন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার জীবন

1.শেখ মুজিবুরের জন্ম ও বাসস্থান

“শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদীর তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।শেখ মুজিবুর রহমান শেখ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।শেখ মুজিবের বাবা শেখ লুৎফুর রহমান যিনি গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন।মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী এবং তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। শেখ মুজিবুরের ছোটবেলার ডাকনাম ছিল খোকা। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পিতার বদলিসূত্রে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেরিবেরি নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং তার হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে।এ কারণে তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। তিনি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুস্থ হবার পর গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।এ সময়ে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনে সক্রিয়কর্মী এবং বহু বছর জেল খাটা কাজী আবদুল হামিদ নামে একজন ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহশিক্ষক ছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি রাজনীতি দলে যোগদান করে।১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার করা হয়। ৭ দিন হাজতবাস করার পর তিনি ছাড়া পান।১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন।

১৯৪১ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ প্রমুখ যোগদান করেন।পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

2.শেখ মুজিবের রাজনীতি ও সফলতাঁর জীবন ………….

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন।১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।ইসলামিয়া কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতেন।ভারত বিভাজনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন।

সে বছরই বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং খাদ্যমন্ত্রী ও পরবর্তীকালে বাংলা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। ঐ সময় বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্কারের দাবি নিয়ে একটি দল তাদের কাছে যায়। এরপর ১৯৪৯ এবং ১৯৫০ সালে ধর্মঘট ও আন্দলনের কারনে আবার গেফতার হয়। দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। এরপর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দলের পর ছাত্রের মৃত্যু শুনে নিন্দা যানায় মুজিব কারাগারে বসে।

এরপর ১৯৫২ সালে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পায়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে নবনির্বাচিত যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জুন শেখ মুজিব প্রথমবারের মতো গণপরিষদের সদস্য হন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কাছ থেকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৮ সালে ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগকে আবার পূণঃজীবিত করেন। ১৯৬৬ সালে ১৮ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ৬ দফা গৃহিত করে।

১৯৬৯ সালে ১৩ জুন শেখ মুজিবর রহমানকে বঙ্গবন্ধুতে ভূষিত করা হয়। এরপর ১৯৭০ সালে ১ জানুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এরপর নিবার্চনে আওয়ামীলীগ জয় লাভ করে। কিন্তু তারা ক্ষমতা না দিয়ে ষড়যন্ত্র করে। ১৯৭১ সালে মুজিব তাদের ষড়যন্ত্র টের পেয়ে ৭ই মার্চ ভাষন দেয়। যে ভাষনের মধ্যে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।

তখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে বাঙ্গালির উপর হামলা করে এবং ৯ মাস যুদ্বের পর ১৬ ডিসেম্বর সাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। তারপর বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি পায়।

এবং নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সকলে ঐক্যবদ্ধ করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি কালো রাত। সেণাবাহিনীর একটা গ্রুপ সেদিন সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।

তার দুই মেয়ে শেখ রেহেনা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাহিরে থাকার কারনে তারা বেচে যায় বাকি সকলকে হত্যা করা হয়।শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর কন্যা।

3.শেখ হাসিনার জীবন ও বর্তমান অবস্থা

শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর।তার মাতা বেগম ফজিলাতুননেসা। তিনি টুঙ্গিপাড়তে বাল্যশিক্ষা নেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়া সাথে তার বিয়ে হয় এবং ওয়াজেদ মিয়া ৯ মে।

তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নামে দুই ছেলে মেয়ে রয়েছেন।শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তার বোন বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। বোনদ্বয় সেইসময় পড়াশোনার জন্য পশ্চিম র্জামানিতে অবস্থান করছিলেন।আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ছয় বছরের নির্বাচিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।

১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯১ সালের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন। তখন তার বিপক্ষ দলের নেত্রি খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা দিতে বাদ্য হয়।

এরপর ১৯৯৬ সালে আবার প্রধানমন্ত্রি জয় নাভ করে। এরপর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক খারাপ ভাবে হেরে যায়।দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে।গ্রেফতারের পূর্বে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচনে শেখ হাসিনা জয় লাভ করে।এবং তিনি শপথ গ্রহন করে। এরপর ২০১৪ সালে আবার নির্বাচন হয় এবং আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় জয় লাভ করে। এবং শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের লক্ষে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে।তিনি বলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কে একটি মধ্যেমায়ের দেশে পরিনত করবে।এবং এই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের প্রদানমন্ত্রি শেখ হাসিনা।

Leave a Comment