আমরা মনে করি বাইরের পরিবেশেই আমাদের বেশি ক্ষতি করে। কিন্তু ঘরের মধ্যেই আমরা ব্যবহার করছি ক্ষতিকর কিছু জিনিস যা হয়তো আরো বেশি ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। ঘরে বা অফিসে ইদানিং মানুষ বেশ বসবাস করে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য ঘরকে নিরাপদ করতে যা যা ব্যবহার করছি তার মধ্যেই রয়েছে ব্যাক ক্ষতিকর টক্সিক পদার্থ।
টক্সিক বলতে এমন সব পদার্থকে বুঝি যা শরীরের কোষে মিশে গিয়ে কোষের ক্ষতি করতে পারে। এমন কি কোষ বা টিস্যুটির মৃত্যুও আনতে পারে। আবার কিছু টক্সিকের কারনে ক্যান্সারও হতে পারে।
Source: https://insectcop.net
১. মশার কয়েলঃ
মশার কয়েলে থাকে সাব মাইক্রন পার্টিকেল। কয়ের পুরে যে ধোয়া হয় তা মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। অনেকে নিয়মিতো ভাবে রাতে একটি করে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখে যা ধীরে ধীরে তার ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
pixabay.com
২. টয়লেট ও গ্লাস ক্লিনারঃ
টয়লেট ক্লিনারে ১০% এর মতো এসিড থাকে। আরো অন্যান্য যে পদার্থ থাকে তা হাতে বা পায়ে লাগলে ক্ষতি হতে পারে। টয়লেট পরিষ্কারের জন্য হারপিক জাতীয় ক্লিনার ব্যবহার করলে সাবধানতার সাথে কাজ করতে হবে। ভাল মতো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
Image by Lisa Redfern from Pixabay
৩. রং ও ডিস্টেম্পারঃ
আগের দিনে ঘরের দেয়ালে খনিজ চুন দেওয়া হতো। যা তেমন ক্ষতিকর ছিল না। সহজে দুই ধরনের রং আলাদা করতে পারেন। তেলের সাথে যা মিশে এবং পানির সাথে যা মিশে। তেলের সাথে মিশানো রং বেশি ক্ষতিকর। দেওয়াল প্লাস্টিক পেইন্ট থাকলে সেটা শরীরে স্পর্শ না করলে অবশ্য তেমন ক্ষতি করবে না। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা দরকার যে দেওয়ালটা ক্ষতিকর এবং খালি শরীরে দেওয়ালে ঠেস দেওয়াও ক্ষতিকর।

৪. শিশুদের খেলনাঃ
শিশুরদের খেলনা তৈরীর প্লাস্টিক উপকরণের অনেকগুলোর মধ্যেই রয়েছে ক্ষতিকর পদার্থ। ছোট শিশুরা যে কোন জিনিস তাদের মুখে দিয়ে দিতে ভাল বাসে। আর তাই তাদের জন্য কাঠের খেলনা দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল।
৫. বোর্ডের ও পিভিসি ফার্নিচারঃ
প্লাই উড এবং পার্টিকেল দিয়ে তৈরী ফার্নিচার এখন বেশ বাজার পেয়েছে। বেশ কম দামে এইসব বোর্ড দিয়ে ফার্নিচার বানানো যায় এবং পোকার আক্রোমনে নষ্টও হতে দেখা যায় না। প্লাই উডে আছে আইসোসায়ানেট বা ফরমাল হাইড্রেড গ্লু ( isocyanate or formaldehyde glues ) যা শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি হতে পারে।
ক্লোরিন এবং ব্রোমিনের বিভিন্ন দ্রবনও বোর্ডে ব্যবহার করা হয় যা আমাদের হরমোনের জন্য ক্ষতিকর। তাই কমদামী বোর্ডের ফার্নিচার ব্যবহার না করে কাঠের তৈরী ফার্নিচার ভাল।
৬. ন্যাফথ্যালিন
একটি রাসায়নিক পদার্থ। দশটি কার্বন পরমাণুর সাথে আটটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে ন্যাপথালিন অণু গঠিত হয়। ন্যাফথ্যালিনের রাসায়নিক সংকেত C10H8। এটা সরলতম পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন। এটা সাদা দানাদার স্ফটিক এবং উগ্র গন্ধযুক্ত। এটি আমরা সাধারণত ড্রয়ারে বা বেসিনে রেখে থাকি। পোকা মাকড় থেকে বাচার জন্য এটি ব্যবহার করা হলেও এটি আমাদের হাতে লেগে গেলে বা শরীরের কোষে প্রবেশ করলে বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
৭. টক্সিক কসমেটিক্স ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পন্যঃ
নানান ধরনের বিষাক্ত পদার্থ কসমেটিক শিল্পের সাথে মিশে গেছে। নিচে কয়েকটির কথা উল্লেখ করা হলোঃ
- ক. বিভিন্ন এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল যেমন-ট্রাইক্লোজান রয়েছে টুথপেষ্ট এবং হ্যান্ড ওয়াসে। এই এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান আমাদের দেহের কোষ শোষণ করে নেয়। এই উপাদান আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় ব্যক্টেরিয়াও মেরে ফেলে ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- খ. নেল পলিশে রয়েছে বুটাইল এসিটেড। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
- গ. সময়ের সাথে সাথে যাতে রং পরিবর্তিত না হয় এ জন্য ব্যবহুত হয় বিউটিলেটেড হাইড্রোক্সিটলুন (Butylated Hydroxytoluene ) । এটি চোখ ও ত্বকের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দেয়।
- ঘ. সাবান, আইল্যাশ, শ্যাম্পু এবং শেভিং ক্রিমে ফরমালডিহাইড ব্যবহৃত হয়। এজমা, ক্যান্সার, জেনেটিক সমস্যা সহ নানান সমস্যা হতে পারে। ইউরোপিও ইউনিয়ন ফরমালডিহাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
- ঙ. টালকম পাওডারের টল্ক এবং চুলের রঙে ব্যবহৃত টলুইনও মানবহেদের জন্য ক্ষতিকর।

৮. কারপেট ও ধুলি কনাঃ
আমেরিকার অনেকগুলো নতুন কার্পেট এনে পরীক্ষা করে বেশ কিছু ক্ষতিকর পদার্থ তথা-টলুইন, বেনজিন, ফরমালডিহাইড, স্টিরিন ও এসটোন পাওয়া গেছে। এই ক্যামিক্যালগুলো চোখ ও নাকের জন্য ক্ষতিকর।
বাজারে নন-টক্সিক কার্পেট পাওয়া অসম্ভব বলা চলে। এজন্য কি করা যায়? উলের কার্পেট বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আবার সলিড কাঠের ফ্লোরিং করা যেতে পারে। কোন কোন সভ্যতায় দ্বিতল ভবনও কাঠ দিয়ে তৈরী করা হতো।
এছাড়াও কার্পেট পরিষ্কার করতেও অনেকে টক্সিক উপাদান ব্যবহার করে থাকে যা আরো বেশি ক্ষতিকর।

৯. ধুলি কনাঃ
ধুলি কনার মধ্যে লাখ লাখ জীবানু থাকে। কার্পেট বা পুরানো কাপড়ে ড্রাই ওয়াশ করলে এর প্রকোপ আরো বাড়ে। কার্পেট মূলতঃ ধুলিকণা সংরক্ষণের দারুন ব্যবস্থাপনা।
নিয়মিত পুরানো কাপড় ধুয়ে ফেলা এবং রোদে শুকানোর ব্যবস্থা করাই সবচেয়ে ভাল হয়।
ঘরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো আসা এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে। স্যাতস্যাতে ভাব না থকলে ধুলকণায় জীবানুর আশ্রয় কমে যায়।

১০. এয়ার ফ্রেশার এবং পারফিউমঃ
আমরা যে এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করি তার অধিকাংশই ক্ষতিকর। বরং এয়ার ফেসার না ব্যাবহারেই পরিবেশ ভাল থাকবে।
এগুলো বানাতে প্রায় ১০০ রকমের ক্যামিক্যাল ব্যবহৃত হয়। ঘরের পরিবেশ নষ্ট করে ওজন স্তরের ক্ষতি করতেও ছাড়ে না। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে।
১১. গ্লাস ক্লিনারঃ

১২. ননস্টিক করাই ও হাড়ি-পাতিলঃ
ইদানিং ননস্টিক হাড়ি-পাতিলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। আমেরিকার প্রায় ৭০% পাতিলই ননস্টিকের। ননস্টিক পাতিলের সবচেয়ে বড় সুবিধা এটি সহজে পরিষ্কার করা যায়। ভাজা-পোড়া রান্নায় তেল কম লাগে, কারণ তেল পাতিলে লেগে যায় না।
নন-স্টিক হাড়ি পাতিলের প্রলেপের অংশটা টেফলন এর যা পারফুরিনেটেড ক্যামিক্যাল দিয়ে তৈরী। রান্নার খাবারের সাথে এই ক্যামিক্যাল উঠে পেটে চলে যায়। তাই লোহা বা পিতলের পাতিল ব্যাবহার করা শ্রেয়।

১৩. পিভিসি ফ্লোরিং
উডেন ফ্লোর নামে পরিচিত পিভিসি ফ্লোর বেশ আরামদায়ক। শীতের দিনে টাইল বেশ ঠান্ডা হয়ে যায় যা উডেন ফ্লোরে হয় না। আবার চাইলে এটি উঠিয়ে ফেলা যায় যা টাইলসের ক্ষেত্রে সম্ভব না। এজন্য অফিসে দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে।
এই ফ্লোর বানাতে ভিনাইল ব্যাবহার করা হয়। শিশুরা ফ্লোরে খেলাধুলা করলে তাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে। এর চেয়ে সিরামিক টাইল এবং কাঠের তৈরী ফ্লোর স্বাস্থ্যসম্মত।

১৪. ক্লোরিনঃ
ইদানিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লোরিন ব্যবহার হয়। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য কিছু কিছু ফিল্টারে ক্লোরিন ব্যহার করে। ক্লোরিন মূলতঃ অন্য ভারী ধাতুর সাথে বিক্রি করে পানিতে ক্ষতিকর ধাতু কমায়। কিন্তু সাথে সাথে অবিক্রিয়াকৃত ক্লোরিন মানুষের দেহে ঢুকে গিয়ে ক্ষতি হতে পারে।
এ ছাড়াও সুইমুক পুল, ওয়াটার পার্কের পানি পরিষ্কার করার জন্যও ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। বাথরুম পরিষ্কারকের মধ্যেও ক্লোরিন রয়েছে।
১৫. মেলামাইন এবং প্লাস্টিকের খাবার পাত্রঃ
মেলামাইনের প্লেট অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে। এখন ঘরে ঘরে মেলামাইনের প্লেট। মেলামাইন এক ধরনের প্লাস্টিক সাস্টেন্স।
২০১৩ সালে এক গবেষণায় গরম পানি ও সাবান দিয়ে সিরামিক এবং মেলামাইনের পাত্র ধুয়ে দেখা যায় মেলামাইনের প্লেটে প্রচুর পরিমানে মেলামাইন বের হয়ে আসে। আমরা অনেক সময় গরম গরম খাবার মেলামেইনের প্লেটে খেয়ে থাকি সাথে প্লেটও খেয়ে থাকি।
তাহলে আমরা কিসের পাত্রে খাব? মেলামাইনের চেয়ে ভাল কাচ, সিরামিক, স্টইনলেস স্টিল, কাঠ বা বাসের পাত্র। এছাড়াও মেলামাইন কিন্তু রিসাইকেল করা যায় না। নষ্ট হয়ে শত শত বছর অপরিবর্তিত থেকে পরিবেশের ক্ষতি করে যায়।

১৬. ক্ষতিকর গাছঃ
কিছু গাছ একই সাথে পুষ্টিকর এবং দেখতেও সুন্দর যেমন এলোভেরা বা ঘৃত কুমারী। আবার কিছু গাছের পাতা বিষাক্ত। কোন গাছের একটা পাতার অংশ খেলেও মানুষ মারা যেতে পারে। বাসায় ছোট্ট বাচ্চা থাকলে জেনে বুঝে গাছ রোপন করা উচিৎ।
নিচে একটা তালিকা দিলাম
Plant | Toxic to Humans | Toxic to Dogs | Toxic to Cats |
---|---|---|---|
Philodendron | Mildly | Yes | Yes |
Pothos | Yes | Yes | Yes |
Arrowhead | Mildly | Mildly | mildly |
Lily | Moderately | Moderately | Yes |
Peace Lily | Yes | Yes | Yes |
Dieffenbachia | Moderately | Moderately | Moderately |
Oleander | Extremely | Extremely | Extremely |
Caladium | Yes | Yes | Yes |
Mother-In-Law’s Tongue | Moderately | Moderately | Moderately |
Ivy | Mildly | Yes | Yes |
Source Where I Learned…
https://link.springer.com/article/10.1007/s00128-016-1938-9
https://www.thoughtco.com/toxic-chemicals-in-cosmetics-607729
https://www.ewg.org/californiacosmetics/toxic20
https://www.organicauthority.com/live-grow/why-avoid-melamine-dishes