যে ২৫ অভ্যাসের কারনে ঠিক মতো ঘুম হয় না

বিভিন্ন কাজের চাপ এবং পরের দিনের গুরুত্বপূর্ণ কোন সিডিউলের কারনে হয়তো রাতে ঘুম হচ্ছে না। কিন্তু কারো কারো নিয়মিতই কম ঘুম হয়। কারো ক্ষেত্রে রাতে একবার ঘুম ভাঙলে আর ঘুম হয় না।

হঠাৎ দুই এক দিন ঘুম কম হওয়া কোন ব্যাপার না, কিন্তু যাদের ঘুম ঠিক হয়ই না তাদের নিচের অভ্যাসগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। এই অভ্যাসগুলো বাদ দিলে আশা করা যায় ভাল ঘুম হবে।

১. রাতের খাবারে পর কফি পানঃ

রাতের খাবারের পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে কফি পান করা যাবে না। ক্যাফেইন শরীরে অনেক সময় অপরিবর্তিত থাকে এবং এটির প্রভাব থেকে যায়।

[tutosubscribe]

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে কফি পান করে তাদের ঘুম অতটা গভীর হয় না। লম্বা সময় ঘুমানোর পরেও তারা পরের দিন অতটা চঙা থাকে না।

ঘুমানোর সময়ের কমপক্ষে পাঁচ ঘন্টা আগে কফি পান করা উচিৎ।

২. বিছানায় মোবাইল ডিভাইজ

আমরা অনেক সময় মনে করি কোন একটা জিনিস মোবাইলে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাবো। ঘুম না হলেও আবার মোবাইলটি হাতে নেই যাতে ঘুম হয়ে যায়। বাস্তবতা ভিন্ন। ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার ঘুমের জন্য ক্ষতিকর।

মোবাইলের আলো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমের কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগে মোবাইল কনটেন্ট দেখা বন্ধ করতে হবে। মোবাইলে কোন কিছু পড়তে বা কনটেন্ট দেখতে হলে আলো একদম কমিয়ে দেখতে হবে।

৩. রাতের পরিশ্রমঃ

ঘুমানোর আগে আগে কঠোর পরিশ্রমের কাজ বা ব্যায়াম করা উচিৎ হবে না। হালকা ব্যায়াম বা হাটাহাটি ভাল। অনেক বেশি পরিশ্রম করলে বেশি রক্তপ্রবাহ হয়, ঘুমের জন্য বেশ সময় লেগে যাবে। কমপক্ষে তিন ঘন্টা আগে কঠোর পরিশ্রম বা কঠিন ব্যায়াম করা উচিৎ। ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম বা হাটাহাটি করা যেতে পারে।

[tutoadsense]

৪. এনার্জি ড্রিঙ্ক বা মদ পানঃ

ঘুমের আগ মুহুর্তে ড্রিংক করলে অনেক সময় ঘুম ঘুম ভাব চলে আসতে পারে। অনেকে ঘুমিয়েও পরে। তার মানে এই নয় এটা ঘুমের জন্য ভাল হলো। এটা সার্বিকভাবে ঘুমের প্যাটার্ন খারাপ করবে। রাতে ঘুম ভাঙলে দেখা যাবে ঘুম হয় না। আবার অন্য সময় ড্রিংক না করলে ভাল ঘুম হবে না।

৫. ঘুমের ঠিক আগ মুহুর্তে খাওয়াঃ

ঘুমের ঠিক আগে আগে খাওয়া দাওয়া করলে শরীরকে ঘুমন্ত অবস্থায়ই পরিপাক ক্রিয়া করতে হয়। শরীর অনেক ব্যস্ত থাকে। রাতের খাবারে এমন কিছু রাখা উচিৎ যাতে ধীরে পরিপাক হয়। রাতে অনেক বেশি খেয়ে ঘুমিয়ে পরলে শরীরে অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে।

৬. অনেক কাজ নিয়ে বিছানায় আসাঃ

অনেক অনেক ঝামেলা নিয়ে কিন্তু সহজে ঘুম হয় না। অনেক কাজের কিছু অংশ করে বা না করে ভিন্ন ভিন্ন সময় ঘুমানো ক্ষতিকর। ডাক্তাররা ঘুমের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারনের পরামর্শ দেন।

৭. ঘুমের ঔষধঃ

ঘুমের ঔষধ প্রথম দিকে ভাল কাজ করে। কিন্তু পরে ঠিক মতো কাজ করে না। সমস্যাটা এখানে না, ঘুমের ঔষধের মাধ্যমে ঘুম হলেও পরের দিন শরীর ঠিক মতো সক্রিয় থাকে না। আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তো ঘুমের ঔষধ গ্রহণ করাই যাবে না।

সাময়িক ইনসোমিয়া ( insomnia ) তে ডাক্তার কখনো অল্প সময়ের জন্য ঘুমের ঔষধ দিতে পারে, কিন্তু সেটা নিয়মিত করা যাবে না।

[tutoadsense]

৮. শেষ মিনিট পর্যন্ত কাজ করতে চাওয়াঃ

অনেকে কাজকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং তার ঘুমকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেয়। কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘুমাবো না -এমন পরিকল্পনাও হাতে নেয় অনেকে। কিন্তু ফলাফল কি হয়? পরের দিন কাজের সময়ই ঘুম থেকে জাগতে পারে না। আবার পরের দিন কাজে পূর্ণ মনও দিতে পারে না। আবার এমনও হয়, কাজটা শেষ হয়েছে- এবার কিন্তু ঘুমটা আর আসছে না।

তাই নিজের ও কাজের প্রয়োজনেই ঘুমকে গুরুত্ব দিতে হবে।

৯. ঘুমানোর চেষ্টা করেই যাওয়া করেই যাওয়াঃ

বিছানায় গিয়েই ঘুমের চেষ্টা করে যাচ্ছেন? ভাবছেন আপনার ঘুম রোগ হলো কিনা? অথবা ঘুমের জন্য বই পড়ছেন বা কিছু একটা? এটা কিন্তু ক্ষতিকর।

শরীরকে তার মতো নিস্তার দিন। কখনো একটু দেরীতে ঘুম হলে হোক। নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া ও একই সময় ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।

১০. আরাম দায়ক পরিবেশ না রাখাঃ

বাইরে হয়তো গান বাজছে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এমন অবস্থায় আপনি হয়তো ঘুমের চেষ্টা করছেন। ঘুম না হওয়ার দোষের কিছু না। নিজের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

১১. দিনের বেলা ঝিমানো বা ঘুম ঘুম ভাব

রাতে জেগে থাকলে দিন ঝিম ঝিম ভাব বা তন্দ্রচ্ছন্নতা গ্রাস করতে পারে। অনেকে অভ্যাসগত দুপুরে কিছুক্ষণ ঝিমায়। চেয়ারে বা সোফায় বা কোথাও ঠেস দিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়া রাতের সুন্দর ঘুমের অন্তরায় হয়ে যায়। শারীরিক সমস্যায় এমনটা হলে ডাক্তার দেখানো উচিৎ।

[tutoadsense]

১২. ঘরকে বিনোদন কেন্দ্র বানানোঃ

অনেকে তার ঘুমানোর ঘরকে বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করে। টেলিভিশন, কম্পিউটার, বাদ্রযন্ত্র ইত্যাদি ইকুইপমেন্টে ঢাসা থাকে। ফলে মন চাইতেই পরে টিভি দেখার বা কোন কিছু বাজানোর ফলে ঘুমকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আর নিয়মিত এ কাজ করলে চেষ্টা করলেও সঠিক সময় ঘুম আসবে না।

১৩. ঘুমানোর আগে ধুমপানঃ

ধুমপান সব সময়ের জন্যই বর্জনীয়। ঘুমের ঠিক আগে আগে ধুমপান কফি এবং এলকোহলের মতোই ঘুম বিরোধী। নিকোটিন হালকা নেশাসৃষ্টি করে যা গভীর রাতে উঠে ধুমপান করার ইচ্ছা তৈরী করে। একেবারে ধুমপান না ছাড়তে পারলে ঘুমের সময়ের অন্ততঃ পাঁচ ঘন্টা আগে ধুমপান বন্ধ করা উচিৎ।

১৪. একই সময় ঘুমাতে না যাওয়াঃ

শরীর অভ্যাসের অনুসরণ করে। অনিয়মিত খাওয়া দাওয়ায় যেমন পরিপাকের সমস্যা হয়, তেমনি একই সময় ঘুমাতে না গেলেও ক্ষতি হয়। আমরা সাধারনও একই সময় ঘুমাতে না গেলেও একই সময় ঘুম থেকে উঠতে চাই। অনেক রাতে ঘুমিয়ে পরের দিন আগে আগে উঠে গেলে ঘুমের অপূর্ণতা থেকে যায়-আবার পরের দিন আগে আগে ঘুমিয়ে পড়লে শরীর বুঝতে পারে না আপনি কখন উঠতে চান।

একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় উঠুন। অনেক সময় আছে তাই আজ একটু বেশি ঘুমাই, কাল কম ঘুমাবো -এটা করবেন না।

১৫. সপ্তাহ শেষে বেশি ঘুমানোঃ

এটা অনেকেরই নিয়মতি অভ্যাস যে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বেশি ঘুমিয়ে নেই। কিন্তু আগের পয়েন্টের মতো এটিও আপনার ঘুমের সাইকেলকে অনিয়মিত করে ফেলে।

[tutoadsense]

১৬. কাজের চাপঃ

ইদানিং অনেকেই বেকার। দিন দিন বেকারের সংখ্যা বাড়বে। অন্য দিকে যারা কাজ করবে তাদের চাপ অনেক বেশি থাকে। কিছু ব্যবস্থাপনামূলক কাজ অনেকে বেশি মানুষিক অশান্তি সৃষ্টি করে, অনেকে বুঝতেও পারে না যে মানুষিক সমস্যাটা তার চাকরীর কারনে হয়েছে বা ব্যবসার কারনে হয়েছে। ডাক্তারগণ অনেক রোগের কারন হিসেবে অফিস সময়ের কাজের ধরণকে চিহ্নিত করেছেন। আর এ জন্য অনেকেরই ঠিক মতো ঘুম হয় না, অনেকে রাতে উঠে কাজ করে যার ফলে তার ঘুমের সাইকেল ঠিক থাকে না। কাজেই প্রয়োজনে চাকরী বা ব্যবসার ধরণ পাল্টে ফেলতে হবে বা নিজের কাজগুলো অন্যকে দিয়ে নিজেকে রিলাক্স দিতে হবে।

আপনি অনেক কাজ করে এক দিকে নিজের ক্ষতি করছেন – অনেকে বেকার থেকে বিষন্নতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ! অদ্ভুৎ না?

১৭. চা পানঃ

চা এ রয়েছে প্রচুর ক্যাফেইন যা আপনাকে চাঙা রাখে। কফির পয়েন্টটাই হুবহু এখানে বলা যায়। সন্ধার পর চা পান না করাই ভাল। একেবারেই চা খেতে হলে হারবাল চা পান করুন।

১৮. চকলেট

মিমি টাইপের/ কালো চকলেট বেশ কিছু ক্ষেত্রে উপকারী। তবে রাতে ঘুমের আগে এই চকলেট চা ও কফির মতোই কাজ করে কারন চকলেটে প্রচুর ক্যাফেইন থাকে।

বাংলাদেশের চকলেটগুলোর অধিকাংশতেই বিভিন্ন ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল থাকে।

১৯. ভাজা পোড়া জাতীয় খাবারঃ

পুরি, সিঙ্গারা বা চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি খাবার রাতে ঘুমানোর আগে খেলে ঠিক মতো ঘুম হয় না। রাতে এ জাতীয় খাবার খেলেও দুই ঘন্টা আগে খেতে হবে। একেবারে পেট ভরা অবস্থায় ঘুম না আসতে পারে।

[tutoadsense]

২০. ঝামেলার বিষয় ঘুমের আগে উত্থাপানঃ

কোন ঝামেলাপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা শরীরের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে। রক্তচলাচল বাড়িয়ে দিতে পারে। ফল ঘুমাতে বেশ কিছু সময় লেগে যাবে। ঘুমের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে হলে সু স্থির অবস্থা প্রয়োজন।

২১. সকালে পর্যাপ্ত সুর্যের আলো না পাওয়াঃ

ঘরে যাতে সকালের সূর্যের আলো এসে পরে এবং আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারেন এমন ব্যবস্থা শরীরের জন্য ভাল। ফোনের এলার্মের চেয়ে সূর্যের আলোর মাধ্যমে ঘুম ভাঙায় শরীর ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙায় আভ্যস্থ হয়। অনেকে জানালায় এমনভাবে পর্দা লাগায় যাতে সকালের সূর্য এসে ঘুম না ভাঙাতে পারে- অথচ ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখে। ফোনের এলার্ম এত দ্রুত জানান দেয় এবং এলার্ম বন্ধ করার জন্য এত দ্রুত একটিভ হতে হয় যা আসলে ক্ষতিকর। ঘুম থেকে ধীরে ধীরে ওঠা ভাল।

২২. ভিটামিন ডি

অনেক বেশি সময় যারা ঘরের ভিতর বা অফিসে থাকে এবং গাড়ীতেই সবসময় থাকে। সূর্যের আলোতে যায়ই না তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন ডি এর অভাবে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। দিন অন্ততঃ ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রোদে থাকা উচিৎ। তবে সেটা সকাল বা বিকেলের রোদ হলে ভাল। দুপুরের রোদ ত্বকের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।

২৩. হাটা ও ব্যায়ামঃ

নিয়মিত হাটা বা পরিশ্রমের কাজ বা ব্যায়াম না করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

[tutoadsense]

২৪. রাতে অনিয়মিতভাবে খাওয়া ও গোছল

অনিয়মিত সময়ে রাতের খাবার খেলে বা কখনো দিনে কখনো রাতে গোছলও ঘুম হতে দেরী হতে পারে। তবে গোছল ঘুমের জন্য ক্ষতিকর না – রাতে হালকা গরম পানি দিয়ে গোছলে ভাল ঘুম হয় -এমনটা গবেষণায় জানা গেছে। তাপমাত্রা বেড়ে আবার কমায় হয়তো এটা হয়।

২৫. অনেক বেশি সময় একা থাকাঃ

অনেক বেশি সময় একা থাকলে শারীরিক একটিভিটিও কম থাকে। দুঃচিন্তা ও বিষন্নতা আকড়ে ধরতে পারে। এতে গভীর রাতে জেগে গিয়ে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

ছবিঃ পিক্সাবে

Leave a Comment