ফ্রিলান্সিং এর শুরুর কথা

প্রাথমিক কথা  

অনলাইনের এ  যুগে বেকার শব্দটি বড্ড বেশি বেমানান।কারণ অনলাইন সারা বিশ্বকে নিয়ে এসেছে আপনার ঘরের কোণে। এখন ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে বিদেশে থাকা নিজের কাছের মানুষের সঙ্গে ভিডিও কথোপকথন, যা আজ থেকে মাত্র ৩ বছর আগেও মানুষের কাছে অসম্ভব এবং অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল।এখন বিষয়টি গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত মানুষের কাছেও অতি পরিচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি বিশাল আবিষ্কার হচ্ছে ইন্টারনেট। এ ইন্টারনেট সারা বিশ্বকে ছোট করে নিয়ে আসার পরই চলে এসেছে বিশাল বড় পরিবর্তন। সারা বিশ্বে ছোট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বড় কোম্পানিগুলোও ভাবা শুরু করেছে, তাদের কাজের জন্য সব স্টাফকে অফিসে নিয়ে এনে বসানোর দরকার নেই। খরচ কমানোর পরিকল্পনাতে তারা সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাজের জন্য লোক নেয়া শুরু করল, যাদের অফিসে না এসে অন্য দেশে ঘরে বসেই সব কাজ করা সম্ভব। অনলাইন বিষয়টিকে এতই সহজ করে দিল, যেটার জন্য এখন আর প্রয়োজন হচ্ছে না নিজের দেশ ত্যাগ করে, নিজের পরিচিত পরিবেশ, বন্ধু-আত্মীয়স্বজনকে ত্যাগ করে দূরে চলে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া। ঘরে বসেই মানুষ এখন বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি করছে। দিনে দিনে এ সংখ্যা আরও বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। অনলাইনে বসে এরকম কাজ করে যারা নিজেদের ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলেছেন, তাদেরকেই ফ্রিল্যান্সার বলে।

online income photo

যা খুব জরুরি

টাকাকে নয় কাজকে ভালবাসতে হবে। ফ্রিল্যান্সিংকে শুধু পার্টটাইম হিসেবে না ফুলটাইম ক্যারিয়ার ভাবা শুরু করতে হবে। কমিউনিকেশন দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। ইংরেজিতে যত ভালো হবেন, তত বেশি সফল হবেন। যত বেশি কিছুতে যত বেশি দক্ষ হবেন, সফল হতে পারবেন তত বেশি। সবসময় নিজের আরও বেশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নেশা থাকতে হবে। যে যত বেশি গুগলের ওপর নির্ভরশীল, তার সফলতার সম্ভাবনা তত বেশি। ইন্টারনেটের ওপর জীবনকে নির্ভরশীল করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং সফল হবেন। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কিছুতেই সফল হওয়া যায় না। ধৈর্যশক্তি এ সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেনে রাখা দরকার, কোনো ধরনের যোগ্যতা ছাড়া, কোনো কষ্ট ছাড়া আয়গুলোর পরিমাণ হলেও অনেক কম হবে এবং বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ লোকদের মূল্য অনেক বেশি হয়। দক্ষ লোকদের জন্য অনলাইন থেকে মাসে ১-২ লাখ টাকা আয় করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সে ক্ষেত্রে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা আপনার বয়স কোনো ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এদেশে নারী কিংবা প্রতিবন্ধী যাদের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য, তারাও ফ্রিল্যান্সিং শিখে পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

কোন সেক্টরে কাজ করবেন?

এ বিষয়টি নিয়ে নতুনদের মনে প্রচুর প্রশ্ন থাকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে আয় করতে আগ্রহী। কিন্তু কোন পথে হাঁটবেন, সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ উত্তরটি আসলে নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। তবে যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা কম, সেজন্য এখানে প্রধান বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেষ্টা করছি। ধারাবাহিকটির পরের পর্বগুলোতে প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত নিয়ে আসব। প্রতিটি পর্ব পড়ার চেষ্টা করুন।

অনলাইনে যে খাতে সবচেয়ে বেশি কাজ

গ্রাফিক ডিজাইন, এসইও, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, ইমেইল মার্কেটিং, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও অ্যাডিটিং, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি।
গ্রাফিক ডিজাইন
যে কোনো কোম্পানির লোগো, ব্রুশিয়ার থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রিন্টিং জাতীয় সব প্রোডাক্ট গ্রাফিক ডিজাইনাররা তৈরি করেন। আবার যে কোনো ওয়েব ডিজাইনের শুরুতে কিংবা ভিডিও এডিটিংয়ের কাজে কিংবা অ্যানিমেশন প্রজেক্টের ক্ষেত্রেও গ্রাফিক ডিজাইনারদের প্রয়োজন। এমনকি এসইও প্রজেক্টের গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এটুকু তথ্যই গ্রাফিক ডিজাইনারদের চাহিদা কেমন বোঝার জন্য যথেষ্ট।

এসইও

বর্তমানে মানুষজন তাদের বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুঁজে বের করার জন্য গুগলে সার্চ দেয়। গুগলের ওপর নির্ভরশীলতা মানুষের দৈনন্দিন কাজকে আরও বেশি সহজ করে দিচ্ছে। যদি কোনো কোম্পানি তার সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্টকে সম্ভাব্য ভোক্তার সার্চের সময় চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারে, তাহলে সেই সার্ভিসটি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর এ কাজটিকেই বলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সংক্ষেপে এসইও। বর্তমানে অনলাইনে মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সব কোম্পানি তাদের সার্ভিসকে প্রচারের জন্য অনলাইনকেই সবচেতে বেশি ব্যবহার করছে। আর সেজন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িকভাবে উন্নতির জন্য এসইও এক্সপার্টদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এসইও এক্সপার্টদের কাজের ক্ষেত্রগুলো সেজন্য অনেক বেশি।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে তাদের মার্কেটিং করে দিলে এবং সেক্ষেত্রে প্রতিটা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের বিক্রির টাকা হতে একটা অংশ পেলে এ বিষয়টাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। আন্তর্জাতিক বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসাকে আরও বেশি বড় করার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেম চালু রেখেছে। বাংলাদেশে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট, ক্লিক ব্যাংক অ্যাফিলিয়েট অনেক বেশি জনপ্রিয়।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

আধুনিক যুগে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অনলাইনেই তৈরি হচ্ছে নিউজ পোর্টাল, টিভি, কমিউনিটি সাইট, ব্লগসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সাইট। এক হিসেব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রতি মিনিটে ৫৬২টি করে নতুন ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে। এ তথ্যটি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজের সম্ভাবনা বুঝতে সহজ করে দিবে আশা করছি। মার্কেট প্লেসগুলোতে ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কিত কাজগুলোর প্রতি ঘণ্টার রেট গ্রাফিক্স কিংবা এসইও সম্পর্কিত কাজের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

ইমেইল মার্কেটিং

অনলাইনে মার্কেটিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। মার্কেট প্লেসে আয়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফলতার জন্য কিংবা নিজের বা অন্যের কোনো ব্যবসার প্রমোশনের কাজের জন্য এটি শিখতে পারেন। কিংবা গ্রাফিক, ওয়েব ডিজাইনের কাজ যোগাড় করার জন্য ইমেইল মার্কেটিংয়ের জ্ঞানটি অনেক বেশি উপকারে আসবে।

অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট

যাদের প্রোগ্রামিংয়ে মোটামুটি ধারণা আছে, তাদের জন্য আমার সবসময়ের পরামর্শ থাকে অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট শিখে নিন। স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে মানে অ্যাপস ডেভেলপারদের চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সেক্টরটির অনেক চাহিদা থাকবে। মার্কেট প্লেসগুলোতে এ ধরনের কাজের প্রতিযোগিতা কম থাকে এবং কাজের প্রতি ঘণ্টা রেটও অনেক বেশি হয়।

ভিডিও অ্যাডিটিং

যারা ভিডিও তৈরি কিংবা অ্যাডিটিং সম্পর্কিত কাজ জানেন, তারাও অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার দিকে এখন নজর দিতে পারে। কারণ এসইও, অ্যাডসেন্স ইনকাম কিংবা অ্যাফিলিয়েশনের আয়ের জন্য বর্তমানে ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ জানা থাকলে অনেক ভালো হয়। আর বর্তমানে একটা অংশ গুগলে কোনো কিছু সার্চ না দিয়ে ইউটিউবেই সার্চ বেশি দেয়। ইউটিউবে সার্চ বৃদ্ধি পাচ্ছে মানে ভিডিও এডিটিংয়ের জ্ঞান এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ফ্রিলান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আমাদের সাইটে

Leave a Comment