চলুন জানি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ভৌতিক স্থানসমূহ সম্পর্কে!

জীন-ভূতের ভয় সবাই করে। এমন কায়কে পাওয়া যাবে না যে জীবনে ভয় পায়নি!
কখনো এমন জায়গায় গিয়েছেন যেখানে গেলে গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে? অথবা ভয়ে আপনি থর থর করে কাঁপছেন! গ্রাম্য এলাকার বাঁশ বাগান, বেত বাগান, ঝোপ-ঝাড়, পুরোনো বাড়ি গুলোতে একা একা রাতের অন্ধকারে হাঁটলে এরকম অনুভুতি হতে পারে।
আমাদের বাড়ির পিছনে বাঁশের, বেতের, গাছগাছালির অনেক ঝোপঝাড়। ওখানে জীন- ভুত থাকে এরকম অনেক গল্প মুরব্বীদের কাছ থেকে অনেক শুনেছি। তার সাথে থাকে সন্ধ্যার পর থেকে শেয়ালের হাঁক, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পেঁচার ডাক আরো কত কি!পুরাই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। সন্ধ্যা হওয়ার পরে ওখানে কেউ যাওয়া দূরে থাক, চোখ দিতেও ভয় লাগে! ভাগ্যিস বিদ্যুৎ থাকে তা না হলে আরো ভয়ঙ্কর লাগতো!এই তো গেলো আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা। পৃথিবীতে এরকম অনেক বিখ্যাত ভয়ঙ্কর জায়গা রয়েছে, তার মধ্য থেকে ১০ টি বেছে নিয়ে সেগুলোর  কিছু বর্ননা নিচে তুলে ধরলাম-

১. বোরলে রেকটরি

colour-borley-ruins
বোরলে রেকটরি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভৌতিক জায়গা হিসেবে পরিচিত। এটি যুক্তরাজ্যের বোরলে গ্রামে অবস্থিত। ১৮৬৩ সালে Reverend Henry Dawson Ellis Bull এর জন্য এটি নির্মান করা হয়।
এখানে নুন কে হাটতে দেখা যায় যাকে প্রেট্রল মেরে মেরে ফেলা হয়েছিল। পুরোনো একটি গল্প প্রচলিত আছে যে নুন বোরলে সম্প্রদায়ের এক সন্ন্যাসীনীর প্রেমে পড়েন। দুজনে চেয়েছিলেন পালিয়ে যেতে কিন্তু ধরা পড়ে যায়।  সন্ন্যাসীনীকে বধ করা হয় আর নুনকে পুড়িয়ে মারা হয় এই ভবনে।

২.স্ট্যানলি হোটেল

img_7542-stanley-hotel
সারা পৃথিবীতে ভূতের অসংখ্য গল্প রয়েছে।  স্টিফেন কিং এর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত The Shining  হরর মুভি দেখলে বুঝা যায় । বইটি লেখার ক্ষেত্রে তাঁকে অনুপ্রানিত করেছিল স্ট্যানলি হোটেল যেটি কলোরাডোর এস্টেস পার্কে অবস্থিত। তিনি যখন এই হোটেলের ২১৭ নাম্বার রুমে অবস্থান করেন তখন নিজেই অনেক ভৌতিক ঘটনা দেখেন। তিনি শুনতে পেতেন ভূতের ছেলেরা পাশের রুমে খেলা করছে! অনেক আত্মা ওখানে ঘুরে বেড়াতো। যখন গেস্ট আসতো তারা দেখতে পেত পিয়ানোর কীগুলো নিজে নিজে মুভ হচ্ছে, মিউজিক বাজছে। এই সকল ভৌতিক ঘটনা যারা দেখতো তাদের জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
৩. টাওয়ার অব লন্ডন

White Tower
ছবিটি অনেক বিখ্যাত ভৌতিক স্থান টাওয়ার অব লন্ডন এর। ১৫৩৬ সালে হেনরি VIII এর একজন স্ত্রীকে এই টাওয়ারে শিরচ্ছেদ করা হয়। ঐ স্ত্রীলোকের আত্মাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেত, মাঝে মাঝে তিনি তার খণ্ডিত মাথা হাতে নিয়ে টাওয়ার গ্রীন এবং টাওয়ার চাপেল রয়েলে হাটতেন।

৪.উডচেস্টার ম্যানশন

OLYMPUS DIGITAL CAMERA
ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ারে অবস্থিত উডচেস্টার ম্যানশনটির ভৌতিক বাড়ি হিসেবে খ্যাতি আছে।
দালানটির নির্মান কাজ শেষ হয়নি। গত ২০০ বছর আগে এটির কাজ করা হয়েছিল শেষ বারেব মত। গুজব আছে এখানে যারা কাজ করতে আসে তারা অনাক্ষাঙ্কিতভাবে মারা যায়। অদ্ভুত নাকের শব্দ পাওয়া যায়, নির্মান কাজের শব্দের মত শব্দ পাওয়া যায়, রোমান সৈন্য এবং যুবতী মেয়েদের দেখতে পাওয়া যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

৫.প্যারিসের কাটাকম্ব

68523390.Zasi9mfW

প্যারিসের কাটাকম্ব ফ্রান্সের প্যারিসের একটি আণ্ডারগ্রাউন্ড অসারি (যেখানে মরা মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল রাখা হয় )।

১৭০০ সালের মাঝা মাঝি এটি নির্মান করা হয় । যারা ৩০ কমপক্ষে ৩০ বছর  আগে মারা গেছে তাদের খুলি এখানে সংরক্ষন করা হয়, এখানকার খুলি, হাড়গুলো রাতের বেলা নিজে নিজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গার যাতায়ার করে বলে কথিত আছে।

৬. দি স্কিরিড ইন!

Haunted-Skirrid-Rope
কুখ্যাত ভৌতিক স্থান গুলোর একটি হল ইংল্যান্ডের ওয়ালেস স্টেটের Llanfihangel Crucorney তে অবস্থিত Skirrid Mountain Inn।  লোক গল্প মতে- ৯০০ বছর আগে এখানে ১৮০ জনেরও বেশি লোক সিঁড়ির বীমের সাথে ফাঁসি দেওয়া হয়। তখন ভবনের প্রথম তলা কোর্ট রুম হিসেবে ব্যবহার হত। এই ঘটনার পরে হঠাত একদিন দেখতে পায় একটা গ্লাস উড়ছে! লোকজন দেখতে পেত জানালায় তারা তাদের ঘাড়ে ফাঁস বানাচ্ছে! ঠান্ডা কক্ষগুলো হঠাত করে গরম হয়ে উঠতো! এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকতো। এসব এর পর ফেনি প্রাইস(দালানটির  মালিক) চিন্তা করলেন এখানে অনেক সক্রিয় আত্মা রয়েছে, অন্য সকল লোকজন এটাকে বিপদজনক স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন এখানে থাকা অনেক ঝুঁকিপূর্ন।

৭ রোজ হল

Rose_Hall_(Jamaica)
জ্যামাইকার মন্টেগো বে এর রোজ হল একটি ভৌতিক স্থান । এখানে Annie Palmer নামে এক মেয়ের আত্মা বাস করে।  তার শাসনামলের ১১ বছরে তাঁকে তার বেডে অত্যাচার করে খুন করা হয়। তিনি তার ৩ স্বামীকে এবং এক ভৃত্যকে বিষ প্রয়োগ করে, যাদু দিয়ে মেরে ফেলেন এবং অন্যান্য ভৃত্যদেরকে চাপ প্রয়োগ করেন লাশ সমুদ্রের পাড়ে সমাহিত করতে।এর সূত্র ধরে পরবর্তীতে তাঁকে মেরে ফেলা হয়।  লিজেন্ডের মতে- এই হলে শুধু নির্যাতিত অ্যানি নয় দাসদের শিশুদের আত্মাও ঘুরাঘুরি করে। এখানে রাত কাটানো সুখকর নয়।

৮ বেল ফার্ম

bell-farm
বেল ফার্ম হন্টিং হিসেবে স্বীকৃত। ১৮১৭ থেকে ১৮২১ সালে একজন মহিলা বেল পরিবারে প্রবেশ করে যার নাম কেট এবং সে জন বেল এবং তার পরিবারকে অত্যাচার করে । এক পর্যায়ে বেল একটি স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন, কেটের এন্টিক তার অবস্থা আরো খারাপ করে তুলে। এবং মারা যায়। তার মৃত্যু শয্যার পাশে একটি কালো তরলের শিশি পাওয়া যায়। প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞরা যখন কেটকে প্রশ্ন করেন শিশিটা কিসের, তখন তিনি বলেন এটা বেলকে দেওয়া হয়েছিল। শিশিটির তরলগুলো যখন তার ঘরের বিড়ালকে দেওয়া হয় তৎক্ষণাৎ বিড়ালটি মারা যায়, অর্থাৎ কেট বেলকে হত্যা করেছেন, এখনো সেই ভবনের আশে পাশে বেলের আত্মা আছে বলে মনে করেন অনেকে এবং সেটাই বিভিন্ন বিপদ ঘটায়।

৯ এডিনবার্ঘ কেসল

-EdinburghCastle-B.img_assist_custom-600x400
স্কটল্যান্ডের অধিক হন্টেড জায়গা হিসেবে এডিনবার্ঘ কেসল অনেক পরিচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক দূর্গ। এটি ৯০০ বছর পুরনো দূর্গ। এটার প্রাচীন অন্ধকূপ, যেখানে অগণিত মৃত্যুহার। অগনিত প্রেত্মাতার জন্য একটি শাশ্বত স্থান । এডিনবার্ঘ নিজে বলেন এটি ইউরোপের সবচেয়ে ভৌতিক জায়গা। বিভিন্ন উপলক্ষে দর্শনাথীরা যখন যেত তখন তারা দেখতে পেয়েছিলেন ভৌতিক বাশিওয়ালা,  মুণ্ডহীন ঢোলবাদক, ফ্রান্সের এই জেল আসামীর আত্মা, কুকুরের আত্মা এবং আরো অনেক কিছু।

১১ ভানগার

BHANGAARGH-FORT
ভারতের মধ্যেও ভূত অনেক পরিচিত। ভারতের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভৌতিক স্থান ভানগার দূর্গ। স্থানীয় লোকজনই এই জায়গার নামকরণ করেন। এই এলাকার চারপাশে একটি প্রসস্থ বার্থ রয়েছে। এলাকাটি এবং শহরকে নিয়ে কিছু জনপ্রিয় ভূতুড়ে গল্প রয়েছে। কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদেরকে সন্ধার পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবশেষ দেখতে অনুমতি প্রদান করেন না । কথিত আছে এক রাজকুমারী একজন জাদুকর থেকে ঘৃণাভরে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন বলে তিনি এই এলাকাটা ধ্বংস করে দেন জাদুকরটি। ১৭০০ শতাব্দীতে এটি আবার ধ্বংস হয় আর্মিদের মাধ্যমে। এই এলাকায় যাদুকরের আত্মা এখনো থাকে বলে রাতে কোন পাখি বা কোন পশু ডাকেনা, সবাই চুপচাপ থাকে বলে কথিত আছে। আজ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি ওখানে রাত কাটানোর সাহস দেখায়নি।

কেমন লাগলো ভৌতিক জায়গাগুলো? বাংলাদেশে এরকম প্রসিদ্ধ ভৌতিক স্থান আছে কিনা আমার জানা নেই। আপনাদের জানা থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানান। ধন্যবাদ।

4 thoughts on “চলুন জানি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ভৌতিক স্থানসমূহ সম্পর্কে!”

  1. অসাধারণ!! তবে কেন জানি আমার ভূতের ভয় করে না। সাহস করে অনেক বার অনেক ভূতের আস্তানায় গেছি রাতের বেলায় তবে ভূত বাবাজীদের সাথে দেখা হয়নি। আমাদের পাশের গ্রামের এক বিশাল তেতুল গাছের তলে অনেক রাতে চুরি করে গেছি ভূতের সাথে আড্ডা দিব বলে কিন্তু ভূত মনে হয় আমাকে পছন্দ করে না।

    1. নিলুফার ইয়াসমিন

      ভয় না করায় ভালো,আমরা অনেক রাতে একা একা ঘর থেকে বের ও হতে পারিনা, তেতুল গাছ তলায় যাব দূরে থাক! ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং কমেন্ট করার জন্য ।

Leave a Comment