বিদায় হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, স্বাগতম সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ

টেবলেট কম্পি্উটার আর মোবাইলের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে ডেস্কটপ কম্পিউটারের উপরে নির্ভরশিলতা কমেছে। আর সেই সাথে কমছে ডেস্কটপ কম্পিউটারের চাহিদা। একই সাথে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের যায়গাটি দখল করে নিয়েছে সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ। বর্তমানে নোটবুক, ল্যাপটপ এমন কি ডেস্কটপ এবং সারভারেও সলিড স্ট্যাট ড্রাইভের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষনের ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। কম ওজনের বহনযোগ্য যে কোন কম্পিউটারের জন্যই সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ (SSD) গ্রহণ যোগ্য।


iSuppli তথ্যমতে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ১১ ভাগ কম আয় হয়েছে হার্ড ড্রাইভ বিক্রি থেকে। এবং উল্লেখযোগ্য পরিমানে ডেস্কটপ কম্পিউটার বিক্রি কমেছে। ধারণা করা হয়েছে এর পরের বছরেও কমতে থাকবে।

সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ (এসএসডি) কি?

সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ কে অনেক সময় সলিড স্ট্যাট ডিস্ক বা ইলেক্ট্রিক্যাল ডিস্কও বলা হয়ে থাকে। তবে এটিতে হার্ডড্রাইভের মতো কোন ডিস্ক থাকে না বা কোন ম্যাকানিক্যাল যন্ত্রও থাকে না। এটিতে অনেক সংখ্যক ইলেক্ট্রিকেল সারকিট (IC) একত্রিতভাবে চীপ আকারে থাকে যাতে তথ্যগুলো সঞ্চয় করা হয়।


হার্ড ড্রাইভ বা ফ্লপি ড্রাইভে মূলতঃ একটি ম্যাগনেটিক ডিস্ক ঘোরে এবং ম্যকানিক্যাল হেড-এর মাধ্যমে ডিস্কে তথ্য সঞ্চয় হয়। আর তাই এসএসডি হার্ডড্রাইভের চেয়ে দ্রুত তথ্য প্রদানে সক্ষম। এসএসডির দামও হার্ডড্রাইভের প্রায় দশগুণ বেশি।

টেকনোলজীঃ

এসএসডি তৈরীর প্রথম দিকে ডিরেম দিয়ে বানানো হতো এবং এটিতে আলাদাভাবে বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হলে তথ্যগুলো ফ্লাস মেমরীতে সংরক্ষিত হতো।

বর্তমানে বেশিভাগ প্রতিষ্ঠানই NAND ফ্লাস চীপ দিয়ে SSD তৈরী করা হয়। এই ফ্লাস চীপগুলো এসএসডিতে প্যারালাল সংযোযিত থাকে।

হার্ড ডিস্ক ও সলিড স্ট্যাট ডিস্কের মধ্যে পার্থক্যঃ

১. চালু হওয়া

সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ মিলি সেকেন্ডে চালু হয়ে কাজের উপযোগি হয়ে যায়। সলিড স্ট্যাট ড্রাইভের ইলেক্ট্রিক চীপে পাওয়ার পাওয়া মাত্র সচল হয়। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে এর ডিস্কগুলো ঘোরা শুরু করে, হেডটি নির্দিষ্ট স্থানে যায় ইত্যাদি কারনে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে যায়।

২. রেনডম একসেস টাইমঃ

যে কোন তথ্য সলিড স্ট্যাট ড্রাইভ থেকে সরাসরি পাওয়া যায়। এবং এতে কয়েক মাইক্র সেকেন্ড সময় লাগে। হার্ডডিস্কের তথ্যগুলো ডিস্কের নির্দিষ্ট স্থান থেকে নেওয়া এবং তা র‌্যাম এ পাঠানোতে ৩ থেকে ১২ মিলি সেকেন্ড সময় লেগে যায়।

৩. ডাটা ট্রান্সফার রেটঃ

এসএসডিতে একটা প্রতি সেকেন্ডে (এসএসডির ধরন অনুসারে) ১০০ থেকে ৬০০ মেগাবাইট প্রর্যন্ত ডাটা ট্রান্সফার করা যায়। এটিতে একটি নির্দিষ্ট ডাটা ট্রান্সফার সময় থাকে যা পরিবর্তন হয় না। হার্ড ড্রাইভে গড়ে ১৪০ মেগাবাইট/সেকেন্ড গতিতে ডাটা ট্রান্সফার হয়। আর এই গতি বিভিন্ন কারনে পরিবর্তিত হতে পারে। আপনার তথ্যগুলো ডিস্কের বিভিন্ন অংশে ছড়ানো (Fragmented) থাকলে বেশি সময় নিবে আবার একসাথে থাকলে কম সময় নিবে। এছাড়াও হার্ডডিস্কের ঘুর্ণন গতির উপরে ডাটা ট্রান্সফার রেট নিভর্র করে। ৪২০০ থেকে ১৫০০০ rpm (ঘুর্নণ প্রতি মিনিট)  এর বিভিন্ন হার্ড ড্রাইভ পাওয়া যায়।

৪. শব্দঃ

SSD তে শব্দ হয় না কারন এটিতে কোন ম্যাকানিক্যাল যন্ত্র নাই। HDD তে হেড, একচুয়েটর, মটর ইত্যাদি ঘোরায় শব্দ বা ভাইব্রেশন হয়।

৫. ম্যাগনেটিক ফিল্ডঃ

HDD তে ম্যাগনেটিক ডিস্ক আছে তাই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারনে তথ্য হারানো ও ডিস্ক নষ্ট হওয়ার ভয় আছে। SSD তে এরকম সমস্যা নাই।

৬. লাইফ টাইমঃ

হার্ড ডিস্ক SSD এর চেয়ে কম লাইভ টাইম। অনেক সময় ডিস্কে ব্যাড সেক্টর পরতে পারে, মটর জ্বলে যেতে পারে। এসএসডির চীপ নষ্ট হলে এটি নষ্ট হয়ে যায়।

৭. সাইজ ও ওজনঃ

বিভিন্ন ধরনের এবং সাইজের এসএসডি রয়েছে। পণ্যের ধরন অনুসারে ১.৮ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত আছে। সেমিকন্ডাক্টর চীপ হওয়ায় ওজন অনেক কম। এইচডিডি ৩.৫ ইঞ্চি ডিস্কই দেখা যায়। আর ওজন ২০০ থেকে ৭০০গ্রাম পর্যন্ত হয়।

৮. দামঃ

সম পরিমান মেমরীর এসএসডির দাম হার্ডড্রাইভের দামের প্রায় দশগুন।

Leave a Comment