স্থির তড়িৎ (statical electricity)

“তড়িৎ” মানেই কি আর “স্থির তড়িৎ” মানেই কি? স্থির মানে আমরা মোটামুটি সবাই জানি। স্থির হল অগতিশীলতা বা এক স্থানে অবস্থান করা। এবার আসা যাক তড়িৎ নিয়ে। তবে তড়িৎ বিষয়টাকে বুঝতে হলে আমাদের কিছু প্রাকৃতিক ঘটনার প্রকৃতি বুঝতে হবে বা কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা দেখতে হবে। এখন কথা হল “প্রাকৃতিক ঘটনা” মানে কি? পদার্থবিজ্ঞানকে অনেক সময় বলা হয় natural philosophy বা প্রাকৃতিক দর্শন। অর্থাৎ প্রকৃতিকে দেখা। প্রকৃতি হল আমাদের চারপাশে যা যা আছে এবং যা যা ঘটে। তাহলে এবার আমরা কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা দেখি। খুবই সাধারন একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি।

আমি তখন ক্লাস টু অথবা থ্রীতে পড়ি। শীতকাল। একদিন আমার বন্ধু মুকুল আমাকে একটা প্রাকৃতিক ঘটনা দেখাল।  সে তার ইকোনো ডি এক্স কলমটা তার তেল না দেওয়া মাথার শুস্ক চুলে কিছুক্ষণ ঘষল। তার আগে সে খাতার একটা পুরোনো পৃষ্টাকে ছিড়ে কুটি কুটি করে টুকরা করল। তারপর সে যখন তার কলমটা ছোট ছোট কাগজের টুকরাগুলোর কাছে নিল অথচ ছোয়াল না কাগজের টুকরাগুলো আপনা আপনি তার কলমের সাথে এসে লেগে গেল। যেন কলমটা কাগজের টুকরাগুলোকে আকর্ষন করছে।

পদার্থবিজ্ঞানের কাজই হল প্রকৃতি বা চারপাশের ঘটনা দর্শন করা এবং কি কারনে তা ঘটছে, কিভাবে ঘটছে তা ব্যাখ্যা করা। এখন এই ঘটনার ব্যাখ্যা কি। এর ব্যাখ্যা জানতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা এমন আরো কিছু জেনে ফেলেছেন যে তার ফলে এখন তুমি এই লেখাটা কম্পিউটারে পড়তে পারছ, মোবাইলে কথা বলতে পারছ, টিভি দেখতে পারছ, রাতের অন্ধকারেও আলো পাচ্ছ। এখন চল আমরা মুকুলের এই ঘটনাটা নিয়ে একটু ভাবি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে চুলের ঘষা খেয়ে কলমটা এমন কিছু বৈশিষ্ট অর্জন করেছে যে সে অপর একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করতে পারছে এবং এর ফলে বস্তুটির সরন ঘটছে। বলবিদ্যায় বা বলবিজ্ঞান হতে আমরা জানি যে কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে তার সরন ঘটলে “কাজ” হয়। আবার কাজ হল শক্তি। অর্থাৎ কলমটা কিছু শক্তি অর্জন করেছে যা দিয়ে সে কাগজের টুকরাগুলোকে সরিয়ে সরণ ঘটিয়ে নিজের দিকে আনার জন্য কিছুটা কাজ করতে পারছে। এখন এই যে শক্তি কলমটার ভিতরে সঞ্চারিত হয়েছে এর একটা নাম দেয়া দরকার। আমাদের কিছু করার নেই। বিজ্ঞানীরা আগেই এর নাম দিয়ে ফেলেছেন। আমি তুমি চাইলেও নাম দিতে পারব না। তা উনারা যে নাম দিয়েছেন সেটাই হল “তড়িৎ” বা “তড়িৎ শক্তি”। অনেক সময় তড়িৎ এর বদলে বিদ্যুৎ বা বিদ্যুৎ শক্তিও বলা হয়। “স্থির তড়িৎ” বা “স্থির তড়িৎ শক্তি” নামটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এই শক্তিটা এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। যেমন কলমটার ভেতর শক্তিটা জমা বা স্থির হয়ে আছে। এখন প্রশ্ন হল কলমের এই শক্তি অর্জনের ঘটনাটা কিভাবে ঘটছে এবং কেন ঘটছে? তার আগে চল আমরা এই ঘটনাটার একটা নাম দেই। নাম অবশ্য দেয়া হয়ে গেছে আগেই তাই ভাল করে বললে বলা যায় এই ঘটনার নামটা কি দেয়া হয়েছে? নামটা দেয়া হয়েছে “বিদ্যুতাহিতকরন” বা “তড়িতাহিতকরন”।

এখন কথা হল আমরা কলমটাকে চুলের সাথে ঘষেছিলাম। এর ফলে কলমটায় “তড়িতাহিতকরন” হয়েছে অর্থাৎ কলমটা “তড়িতাহিত” হয়েছে। কেন কলমটা তড়িতাহিত হল?? আমরা ধারনা করতে পারি ঘর্ষনের ফলে কলমটায় “একটা কিছু” উৎপন্ন হয়েছে বা চুল থেকে এসেছে   যা কলমটাকে শক্তির যোগান দিয়েছে এবং এর ফলে তড়িতাহিত করেছে। এই “একটা কিছু”-এর নাম হল “আধান” বা “চার্জ”। এখন প্রশ্ন হল এই “তড়িতাহিতকরন” কি কেবল ইকোনো ডি এক্স কলম আর মুকুলের চুলের ফলেই ঘটে? না কেবল এই কলম আর চুল নয় আরো অনেক বস্তু আছে যাদের ঘর্ষনের ফলে এই ঘটনা ঘটে এবং সেইসব তড়িতাহিত বস্তুকে কেবল কাগজ নয় অন্য আরো অনেক বস্তুর কাছে নিলে তারা সেই বস্তুটিকে আকর্ষণ করে। যেমন একটা শুকনো কাচ দন্ডকে একটুকরো শুকনো রেশমী কাপড় দিয়ে ঘষলে কাচ দন্ডটিতেও আধানের উৎপত্তি ঘটে যার ফলে সেটা একটা শোলার বলকে আকর্ষন করে। আবার একটা ইবোনাইট দন্ডকে (চাঁচ গালা ) পশম দিয়ে ঘষলে সেটাও ছোট ছোট কাগজের টুকরাকে আকর্ষন করে অর্থাৎ বিদ্যুৎ শক্তি লাভ করে। ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন হয় বলে এই বিদ্যুতকে স্থির বিদ্যুত ছাড়াও ঘর্ষ বিদ্যুতও বলা হয়।

পরবর্তী পর্বে আমরা আধানের বিভিন্ন প্রকৃতি এবং তা সনাক্তকরনের উপায় সম্পর্কে জানব।

6 thoughts on “স্থির তড়িৎ (statical electricity)”

  1. আসলে ছোট বেলার কথাই মনে পরে যায়। একটা সময় প্রায়ই কলম দিয়ে চুম্বক বানাতাম। স্থির তড়িত না কি তা জানার দরকার ছিল না, খেলাচ্ছলে এ বিষয়ে বেশ দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছিলাম। চুম্বক আর স্থির তড়িত কে এক মনে করতাম।
    চুম্বক সম্পর্কে পড়েছি কিন্তু আমার মনের মতো ব্যাখ্যা এখনো পাই নি। আমার মনে হয় অনেক কিছুই জানার বাকি আছে।
    ছোটদের জন্য আপনার জ্ঞান ভান্ডারের কিছু অংশ শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

  2. অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার পরীক্ষা শেষ হলে পুরোদমে লেখালেখি শুরু করব। এস,এস,সি এবং এইচ,এস,সি এর বিজ্ঞান বিভাগকে সমৃদ্ধ করে তুলব আশা রাখি।

  3. সুলতানা

    ধন্যবাদ রাজ ভাই। আপনার লেখার অপেক্ষায় ছিলাম,অনেক দিন পরে আপনার পোস্ট পেয়ে খুবই খুসি হয়েছি। শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আন্তরিক ও সহজভাবে লেখা এটিই প্রথম মনে হয়। আপনার জন্য শুভ কামনা।

  4. Wow, amazing blog layout! How long have you been blogging for? you made blogging look easy. The overall look of your web site is great, as well as the content!. Thanks For Your article about স্থির তড়িৎ (statical electricity) | টিউটোরিয়ালবিডি .

Leave a Comment